সুপ্রিয় দর্শকবৃন্দ শীত চলে এসেছে। শীতে আপনার শিশুর স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি আমাদের মূল লক্ষ্য। শীতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় অনেকাংশে। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আমাদের অবশ্যই শিশুর যত্নে শিশুর খাবারের প্রতি সচেতন হতে হবে। শীতে শিশুর যত্নে যে আটটি খাবার অবশ্যই খাওয়াতে হবে তা নিচে দেওয়া হলো:
১. শিশুর যত্নে প্রথমেই খাবারের তালিকায় রয়েছে ডিম। ডিমের সাদা অংশে রয়েছে প্রোটিন। আর ডিমের কুসুমে রয়েছে ফ্যাট ও ক্যালরি। ক্যালরি শরীর গরম রাখতে সহায়তা করে।
ডিমের কুসুমে অনেক রকমের ভিটামিন রয়েছে। তার মধ্যে হলো একটা ভিটামিন ডি। যেটা শীতকালে আমরা বলি রোদ যদি শরীরে লাগে তাহলে আমাদের চামড়ার নিচের কলেসট্রলে ভিটামিন ডি তে পরিণত হয়।
ভিটামিন ডি টা আমরা সেখান থেকেই পাই। শীতের রোদে কিন্তু এর সম্ভাবনাটা অনেকাংশে কমে আসে। এজন্য আমাদের শিশুর যত্নে অবশ্যই ডিমের কুসুম খাওয়াতে হবে। ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি' রয়েছে।
ভিটামিন ডি' শিশুর ক্যালসিয়াম তৈরিতে সহায়তা করে এবং ভিটামিন ডি' শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। আর প্রোটিন তো সবসময় শরীর গঠনে সহায়তা করে। আপনারা শিশুর অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি একটা বা দুটো ডিম রাখার চেষ্টা করবেন।
এক বছরের নিচে শিশুকে আপনি একটা করে ডিম খাওয়াতে পারেন। এক বছরের উপর পাঁচ বছর পর্যন্ত দুটো করে ডিম খেতে দিতে পারেন। ডিম একটি ভালো উৎস প্রোটিন ও ভিটামিনের। সুতরাং বোঝা গেল শীতে শিশুর যত্নে ডিম একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার যা আমাদের প্রতিদিনই খাওয়াতে হবে।
২. শীতকাল মানেই শিশুর নানা ধরনের অসুখ-বিসুখের সময়। শীতে শিশুর পুষ্টির জন্য দুধ একটি প্রয়োজনীয় খাবার । নিয়মিত এক গ্লাস গরম দুধের কোন বিকল্প নেই। দুধ একটি আদর্শ খাদ্য। দুধ একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে নিয়মিত শিশুদের যত্নে খাওয়াতে হব। ফলে শীতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে ও সুস্থ থাকবে।
৩. আমরা সবাই জানি পানির অপর নাম জীবন। তবে শীতকালে শিশুদের শরীরে পানির ঘাটতি বেশি দেখা দেয়। এর ফলে শিশুরা ডিহাইড্রেড সহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে।
শীতকালে শিশুরা একেবারে পানি পান করতে চায় না। তাই আমাদের বয়স বুঝে সঠিক পরিমাণে হালকা গরম পানি শিশুদের পান করতে দিতে হবে। তাই শিশুর যত্নে পানি পানের প্রতি আমাদের সচেতন হতে হবে।
৪. শীতকালে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার শিশুদের শরীরের জন্য ভীষণ প্রয়োজন। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ করে সহায়তা করে।
বিশেষ করে ঠান্ডা কাশি জনিত সমস্যা ভালো করার জন্য ভিটামিন সি এর বিকল্প নেই এবং এর সাথে ভিটামিন মিনারেল রয়েছে যেগুলো শিশুর শরীরের জন্য খুবই ভালো একটি উপাদান।
এজন্য আপনি আপনার শিশুকে এটা খাওয়াতে পারেন।যেমন কমলালেবু, লেবু, পেয়ারা, এজন্য শীতে শিশুর যত্নে আমরা এটা খাওয়াতে পারি।
৫. শাকসবজি শীতে শিশুর যত্নে আপনারা প্রতিদিনই শিশুদের খাওয়াতে পারেন। শীতকালে আপনার শিশুকে সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই শাকসবজি খাওয়াতে হবে। শাকসবজিতে সব ধরনের পুষ্টি ও ভিটামিন বিদ্যমান যা আপনার শিশুর শরীর গঠন ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
৬. আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের বাদাম পাওয়া যায়। যেমন চিনা বাদাম কেশালার বাদাম। বাদামে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন মিনারেল ও ফলিক অ্যাসিড থাকে। জিংক ফোলিক এসিড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে খুবই ভালো।
এগুলো ফুসফুস জনিত রোগ যেমন অ্যাজমা কাশি ইত্যাদি রোগ থেকে বাঁচতে সহায়তা করে সহায়তা করে। তাই শিশুর যত্নে আপনাদের অবশ্যই শিশুদের বাদাম খাওয়াতে হবে।
৭. মিষ্টি আলুতে থাকা বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন এ, কে শীতের মধ্যে খুব একটি কার্যকর খাবার। সুস্বাদু হওয়ার ফলে এটা শিশুদের খাওয়াতে সেরকম অসুবিধাও হয় না। শিশুর যত্নে এটি একটি কার্যকরী খাবার বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন।
৮. গুড় ও মিষ্টি জাতীয় খাবার আপনারা জানেন শিশুরাও গুড় মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে খুবই পছন্দ কর। আপনি জানেন গুড় আপনার শিশুর শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগাবে ও তার বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। শিশুর যত্নে এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। শীতকালে আমাদের অবশ্যই শিশুর খাবারের প্রতি যত্নবান হতে হবে।
ছয় মাসের শিশুর বিকাশ
ছয় মাস বয়সে শিশুর বিকাশ শুরু হয়। এ সময় তাদের ওজন হবে জন্মের ওজনের দ্বিগুণ। এ সময় শিশুদের ঘাড় শক্ত হয়। কাত হতে শুরু করে। শিশুর দাঁতের মাড়ির শক্ত হয়। ফলে তারা হাতের কাছে যা কিছু পায় মুখে দেয় এবং তা চিবানোর চেষ্টা করে। তারা রং চিনতে শুরু করে, তাদের নাম ধরে ডাকলে সেটাও বুঝতে পারে।
এ সময় তারা পরিবারের সদস্যকে চিনতে পারে এবং তাদের দেখলে হাসে বা অন্যান্য শরীরের অঙ্গভঙ্গি করে। এসব কিছুই ছয় মাস বয়সী শিশুর বিকাশ। এ সময় শিশুদের ধরলে তারা পায়ে ভার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও পারে। শিশুর বিকাশের সময় আমাদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে।
৭ মাস বয়সী শিশুর খাবারের তালিকা
ছয় মাসে বয়সী শিশুদের দুইবার খাবার দিলেও সাত মাস বয়সী শিশুদের তিন বার খাবার দিতে হবে। সকালে দুপুরে ও রাতে ভারী খাবার দিতে হবে। সকালে সাবু, সুজি অথবা একটা ডিম খাওয়াতে পারি। দুপুরে খিচুড়ি অথবা আমিষ জাতীয় কোন খাবার দিয়ে ভাত খাওয়াতে পারি।
যেমন কলিজা, মাছ, মাংস ইত্যাদি। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে খাবারটি যেন খুব ভালোভাবে সিদ্ধ হয়। এসব খাবার সাত মাস বয়সী শিশুর বৃদ্ধি এবং মাংসপেশি গঠনে সহায়তা করবে।
শেষ কথা: পরিশেষে বলা যায় যে, মায়ের বুকের দুধের বিকল্প আর কিছু হয় না শিশুর জন্য। তবে এর পাশাপাশি ৬ বছর বয়সী শিশুদের হালকা খাবারএবং সাত বছর বয়সেই শিশুদের ভারী খাবার দিতে পারেন। শীতে শিশুর যত্নে আমরা আরো অনেক খাবার খাওয়াতে পারি। তবে শীতে আমাদের শিশুদের প্রতি অবশ্যই অনেক বেশি যত্নবান হতে হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন