প্রিয় দর্শকবৃন্দ,আজকে আমি জানাবো টেনশন দূর করার সহজ উপায়। অতিরিক্ত টেনশন বা দুশ্চিন্তা করলে যা হয়। টেনশন বা দুশ্চিন্তা এক ধরনের মানসিক রোগ এ কারণে শুরু থেকে এ রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।
জীবন যতদিন আছে সমস্যা ততদিন থাকবে। সেটা নিয়ে টেনশন করা যাবে না। টেনশন করলে অনেক সময় স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা করার পথ শেষ হয়ে যায়। তাই আমরা টেনশন করবো না। টেনশন দূর করার দশটি সহজ উপায় আমি নিচে বর্ণনা করলাম:
- টেনশন দূর করতে হলে আমাদের অবশ্যই শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে। শারীরিক ব্যায়াম করলে যেটা হয় - ব্রেন থেকে এক ধরনের কেমিক্যাল মিশ্রিত হয় শিরটোনিম। যা আমাদের মনকে ভালো করে দেয়। সুতরাং আমরা প্রতিদিনই একটি শারীরিক ব্যায়াম করবো। এটা হতে পারে জোরে হাটা, দৌড়ানো বা জগিং ৩০ মিনিট।যা আমাদের সব টেনশন দূর করে দিবে।
- টেনশন দূর করার জন্য আমরা একটা মানসিক ব্যায়াম করতে পারি। যেমন ইয়োগা বা শূন্য মনোনিবেশ। এটি একটি সহজ উপায় টেনশন দূর করার।
- বিভিন্ন ক্যাফিন জাতীয় খাবার পরিহার করেও আমরা টেনশন দূর করতে পারি। যেমন: চা , কফি, এনার্জি ড্রিংক ইত্যাদি। এসব খাবার খেলে ঘুম কম হবে। বুক ধরপর করবে। এসব খাবার না খেয়েও আমরা সহজে টেনশন দূর করব।
- সুস্থ জীবন যাপন যেমন নিয়মিত ব্যায়াম অ্যালকোহল সেবন না করা, সুসম খাদ্য গ্রহণ করা একটি সহজ উপায় টেনশন দূর করার।
- নিজের ব্যক্তিগত কথা বা সমস্যা আপনজন শুভাকাঙ্ক্ষী বা বন্ধুবান্ধবের সাথে আলোচনা করা। এছাড়া প্রয়োজন বোধে তাদের সুপরামর্শ নেওয়া। এর ফলে মন হালকা হবে, ভালো লাগবে এবং সহজেই টেনশন দূর হবে।
- ২০০৫ সালের পরিচালিত গবেষণায় জানা যায় সব সময় গম্ভীর হয়ে থাকার বদলে প্রাণ খুলে হাসলে শতকরা ২০ ভাগ ক্যালোরি পুরনো যায়। প্রাপ্তবয়স্ক কিছু মানুষকে নিয়মিত হাস্যকর চলচ্চিত্রের তুলনায় গম্ভীর চলচ্চিত্র দেখানোর পর গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে হাসি সহজেই মানুষের সব টেনশন দূর করে।তাই ঠোঁটের কোণে হাসিটা রাখবো। যদি পারি প্রাণ খুলে হাসবো সবাই।
- নিয়মিত ডাইরি লিখব। আমরা তো অনেকেই কখনো ডায়েরি লিখি নাই। যে বিষয়টা আমাদের মনকে কষ্ট দিচ্ছে বা মানসিক টেনশন দিচ্ছে আমরা সেটা ডায়েরিতে লিখব। পাশাপাশি আমরা কি চাই কি করলে আমাদের ভালো লাগে সেই বিষয়টাও লিখব। ডায়রি লেখার এ অভ্যাসটি টেনশন সহজে দূর করতে সাহায্য করবে।
- আমরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে টেনশন দূর করতে পারি। আবার কানে হেডফোন লাগিয়ে বৃষ্টির শব্দ, পাখির ডাক শুনতে পারি। কারো যদি গান ভালো লাগে গানও শুনতে পারি। এসব কিছুই আমাদের টেনশন দূর করতে সাহায্য করে।
- টেনশন দূর করতে হলে আমাদের অবশ্যই ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে। এটি একটি বিশেষ দিক টেনশন দূর করার। যদি আমরা ভাবি যে আগামীকাল আমার অফিসে প্রেজেন্টেশন আছে এবং সেটা আমি ভালোভাবে দিব। দেখবেন সেটি অবশ্যই ভালো হবে এবং টেনশন আসবেনা। তবে বলা যায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক সহজে টেনশন দূর করার।
- আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর মধ্য দিয়ে টেনশন দূর করতে পারি। ঘুম মানুষের মন ও মাথা সতেজ রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু বর্তমানে না ঘুমিয়ে থাকা বা কম ঘুমানোর প্রবণতা দেখা যায়। আমরা যদি প্রতিদিন ৭ হতে ৮ ঘন্টা ঘুমাই তবে মন ও মাথা সতেজ থাকবে। ফলে যেকোনো ধরনের সমস্যা সহজে সমাধান করতে পারব ,আর কোন টেনশনও আসবে না। এটি একটি সহজ উপায় টেনশন করার।
অতিরিক্ত টেনশন হওয়ার লক্ষণ
অতিরিক্ত টেনশন হলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন মাথা ঝিমঝিম, মাথাব্যথা, হাই ব্লাড প্রেসার ডায়াবেটিস বুক ধরপর করতে পারে, নিশ্বাস ছোট হয়ে আসে। খুদা কমে যায়,মেজাজ খিট খিটে হয়ে যায়, গলা শুকিয়ে আসে, মাংসপেশি শক্ত হয়ে আসে। এসব কিছু হলে বুঝতে হবে অতিরিক্ত টেনশন হচ্ছে।
টেনশন দূর করার খাবার
টেনশন দূর করার বিভিন্ন খাবার রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই আছে ডিম। ডিমের প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে। এছাড়াও আছে ভিটামিন ও খনিজ যা আমাদের শরীরের সহজেই গৃহীত হয়। টক দই মানসিক চাপ কমাতে খুবই উপকারী একটি খাবার। কাঠবাদাম, আখরোট, চিনেবাদাম এসব খাবার সহজে টেনশন দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার যেমন জলপাই, আমলকি, কামরাঙ্গা ইত্যাদি এসব খাবার খুব সহজে টেনশন দূর করে।
কিভাবে অতিরিক্ত টেনশন থেকে মুক্তি পাবেন
অতিরিক্ত টেনশন থেকে মুক্তি পেতে হলে ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে। নিয়মিত ডায়েরি লিখতে হবে। মানসিক ব্যায়াম করতে হবে যেমন ইয়োগা। অবশ্যই প্রাণ খুলে হাসতে হবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুমিয়েও আমরা অতিরিক্ত টেনশন থেকে মুক্তি পেতে পারি।
অতিরিক্ত টেনশন হলে শরীরে কি কি ক্ষতি হতে পারে
অতিরিক্ত টেনশন হলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ বাসা বাধতে পারে। যেমন হার্টের সমস্যা হতে পারে, হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, মাথা ব্যথা, পায়ের মাংসপেশি ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ,পেট ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
শেষ কথা: পরিশেষে বলা যায় যে, আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই টেনশন পরিহার করতে হবে। টেনশন পরিহার না করতে পারলে আমরা কখনই সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবোনা। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে ও টেনশন থেকে দূরে থাকতে হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন