আমরা আজকে জানবো রেবিস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত বা জলাতঙ্ক রোগের লক্ষন সম্পর্কে। আমরা সবাই জানি যে রেবিস ভাইরাসে আক্রান্ত একটি ভয়ানক রোগ হলো জলাতঙ্ক। যেখানে এই রোগে আক্রান্ত হলে ৯৯ শতাংশ মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।
এই রোগের বিশেষ একটি লক্ষণ হল জলাতঙ্ক বা হাইড্রোফোভিয়া। এক্ষেত্রে রোগী শুধু যে জল খেতে ভয় পায় তা কিন্তু নয় অনেকেই জলের নাম শুনলেই ভয় চলে আসে আর এই যে অদ্ভুত আচরণ দেখা যায় জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত রোগীদের।
জলাতঙ্ক খুব কঠিন রোগ যা একবার হলে রোগীকে বাঁচানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতিবছর জলাতঙ্ক রোগের কারণে সারা বিশ্বে ৫০-৭০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। তবে বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসার কারণে কিছুটা হলেও শুরাহা করা যায়। রেবিস ভাইরাস দ্বারা কোন মানুষ, বিড়াল, কুকুর আক্রান্ত হলে যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় তাকে বলা হয় জলাতঙ্ক।
কুকুর বিড়াল বানর বেজি শেয়াল বাদুর ইত্যাদি প্রাণী রেবিস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে এবং তা মানুষকে কামড়ালে জলাতঙ্ক রোগ হয়। জলাতঙ্ক রোগ এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীর শরীরে স্থানান্তরিত হতে পারে তার লালা বা রক্তের দ্বারা। এদের মুখের লালায় রেবিস ভাইরাসের জীবাণু থাকে কোনভাবে তার লালা সুস্থ কোন প্রাণী বা মানুষের রক্তের সংস্পর্শে আসলে রক্তের মাধ্যমে তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে জলাতঙ্ক রোগের সৃষ্টি হয়।
বিড়ালের আঁচড়ে কি রোগ হয়
আমরা সকলে জানি কুকুর এবং বিড়াল যদি জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয় সেই জলাতঙ্ক আক্রান্ত বিড়াল যদি অন্য কোন মানুষ বা প্রাণীকে আঁচড়ে বা কামর দেয় তাহলে ওই প্রাণী বা মানুষটি জ্বলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়।
তবে এক্ষেত্রে যদি পোষা বেড়াল যেমন সে বাচ্চা থেকেই আপনার কাছে আছে এবং সে বাইরে ঘোরাফেরা করে না সারাক্ষণ আপনার বাসার মধ্যেই থাকে এবং অন্য কোন প্রাণী যেমন কুকুর বা জলাতঙ্ক বহন করে এরকম কোন প্রাণী যদি কামড়ে না থাকে আপনার বেড়ালকে তাহলে আপনার জলাতঙ্ক হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কম থাকে। এক্ষেত্রে আপনাকে যদি আপনার পোষা বেড়াল আঁচড়ে দেয় তাহলে সেরকম ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এক্ষেত্রে আপনি সাবধান থাকার জন্য আপনার পোষা বিড়ালকে ভ্যাকসিন দিতে পারেন।
বিড়ালের কামড়ে কি জলাতঙ্ক হয়
বিড়ালের কামড় বা আঁচড়ে খাওয়ার অভিজ্ঞতা নেই এমন বিড়ালের মালিক খুঁজে পাওয়া ভার। তবে বিড়ালের কামড় খাওয়ার পর অনেকেই বুঝতে পারেন না যে কি করবেন আবার অনেকে দুশ্চিন্তাও করে থাকেন জলাতঙ্কের। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। জলাতঙ্ক রোগ সম্পূর্ণ নির্ভর করে তাদের সেই কেটে যাওয়া বা আঁচড়ে যাওয়ার ক্ষত স্থানের উপর। বিড়ালের কামড়ে জলাতঙ্ক হয় এক্ষেত্রে যদি সেটা বাইরের কোন বিড়াল হয় তাহলে বিড়ালের কামড়ে জলাতঙ্ক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি।
তবে প্রথমেই যে দিকটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে বা নজর দিতে হবে তা হল বিড়ালের কামড়ে আমাদের শরীরে কতটা ক্ষত হয়েছে বা ক্ষত হয়েছে কিনা সেটা আগে নিশ্চিত হতে হবে। কেননা যদি ক্ষত খুব গভীর হয় এবং রক্তপাত হয় তাহলে প্রথমেই প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ক্ষার যুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে খুব ভালোভাবে 15 থেকে 20 মিনিট পর্যন্ত আমাদের ক্ষতস্থানটি ঘষে ঘষে ধুতে হবে এবং খুব জোরে পানি প্রবাহ বা পানি ঢালতে হবে এতে 70 থেকে 80 ভাগ জীবাণু শেষ হয়ে যাবে বা মারা যাবে। এক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বিড়ালের আঁচড়ে কি ভ্যাকসিন দিতে হয়
অধিকাংশ মানুষ জীবজন্তুর কামড়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। চিন্তা করতে পারেনা কি করবেন। যার কারনে অনেকেই অপচিকিৎসা শিকার হন। যার পরিণতি হয় খুব ভয়াবহ কখনো কখনো মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। আর ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে যা করনীয় তা বর্ণনা করলাম।
কিছু কিছু জীবজন্তুর কামড়ে আমাদের ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজন আবার কিছু কিছু দুজনকে ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন না নিল চলে এখন কোন পর্যায়ে আহত হলে বা কি অবস্থায় থাকলে আমাদের ভ্যাকসিন নিতে হবে তা অবশ্যই জানতে হবে সবাইকে।
প্রথমে যদি বিড়ালের আঁচড়ে শরীরে রক্তক্ষরণ না হয় বা কোন ভাবে কেটে না গিয়ে থাকে তাহলে কোন প্রকার ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হয় না। এরপর যদি বিড়ালের আঁচড়ের ফলে শরীরে রক্তক্ষরণ বা কেটে গিয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ভ্যাকসিন নিতে হবে। জীবজন্তুর আচরে যদি শরীরে এক বা একাধিক ক্ষত সৃষ্টি হয় তাহলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভ্যাকসিন নিতে হবে এবং ভ্যাকসিনের সাথে রেবিস ভ্যাকসিন অবশ্যই নিতে হবে।
এছাড়াও রেবিশ ইমিউলিক গ্লোবলিং একটা ওষুধ আছে সেটিও সেবন করতে হবে। আমাদের দেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে র্যাবিস ভ্যাকসিন ফ্রিতে পাওয়া যায় যদি গ্রামাঞ্চলে কোন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে না পাওয়া যায় তাহলে এটি সরকারি হাসপাতালে অবশ্যই পাওয়া যাবে।
বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়
বেড়াল কামড়ালে রক্তক্ষরণ হলে আর যদি সেখানে ভ্যাকসিন বা প্রাথমিক চিকিৎসা না নেওয়া হয় তাহলে মৃত্যুর ঝুঁকি ১০০ শতাংশ। বিড়াল কামড়ালে বা যে কোন প্রাণী হোক না সেটা কুকুর, বানর, ইঁদুর, বাদুর ইত্যাদি আমাদের অবশ্যই ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভ্যাকসিন নিতে হবে। এই ভ্যাকসিন সরকারি হাসপাতালগুলোতে একেবারেই ফ্রি পাওয়া যায়। যদি হাঁস পালের না হাসপাতালে না পেয়ে থাকেন তাহলে এটি কিনে দিতে পারেন।
বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি সমস্যা হয়
বিড়াল কমবেশি সবার বাড়িতে আসে। আবার কারো বাসায় পোষাক বেড়াল থাকে এসেছে বিড়ালের আচারের ঝুঁকিটা থেকেই যায়। বিড়ালের নখের আঁচড়ে জলাতঙ্ক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেকাংশে। যদি সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়। পা কেটে যায়। তাহলে হোক না সেটা পোষা বিড়াল বা বাইরের কোনো বিড়াল অবশ্যই ভ্যাকসিন নিতে হবে।
তা না হলে জলাতঙ্ক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রায় শতাংশ। যদি মনে করেন যে এটা তো পোষা বেড়াল তাহলে আমার এই সমস্যা হবে না এ ধারণা ভুল। কারন আপনার পোষা বেড়ালকে অন্য কোন জল আতঙ্ক আক্রান্ত প্রাণী আচরে বা কামড়ে কিনা সেটা আপনি নিশ্চিত না। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে ভ্যাকসিন দিতেই হবে।
বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন
কুকুরের মত বিড়ালের ও জলাতঙ্ক হয় এটি একটি অনেক পরিচিত এবং ভয়ংকর একটি রোগ। বিড়ালের জলাতঙ্ক একটি প্রাণঘাতী রোগ। এ রোগের ভাইরাস সে আর বিড়াল, কুকুর, বানর, বাদুর ইঁদুর ইত্যাদি প্রাণী বহন করে থাকে।
এইসব প্রাণীর কামড়ে বা আঁচড়ে বেড়ালের মধ্যে এই রোগটি ছড়ায়। আবার জলাতঙ্ক আক্রান্ত বিড়ালের কামড়ে মানুষের এবং অন্যান্য প্রাণীর এরও হয়ে থাকে। ভাইরাসটির শরীরে প্রবেশের পরে মস্তিষ্ক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বিড়ালের ক্ষেত্রে দুই থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
বিড়ালের জলাতঙ্ক হলে বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারে না। যদি বিড়ালের জলাতঙ্ক হয় তাহলে এর কোন চিকিৎসা নেই কিন্তু প্রতিষেধক আছে। তবে ভ্যাকসিন বা প্রতিশেধেক দেওয়ার মাধ্যমে বিড়ালকে বাঁচানো যায়। তাই সচেতনতার মাধ্যমে এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে জলাতঙ্ক হয়
বেড়াল কামরানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট টিকা রয়েছে যা কামড়ানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই নিতে হবে। এই টিকাটির নাম হলো অ্যান্টি রেবিস ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিনটা আমাদের শরীরে জলাতঙ্ক আক্রান্ত বিড়ালের পা কুকুরের কামড়ানোর ফলে যে রেবিস দ্বারা আমরা আক্রান্ত হই সেই জীবাণুকে সম্পূর্ণ মেরে ফেলে। তখন এই জলাতঙ্ক রোগের ভয়টা আর একজন মানুষের মধ্যে থাকে না।
তবে মনে রাখতে হবে আমাদের বাসার বিড়াল বা আশেপাশের কোন বিড়াল আমাদের যদি কামড়ায় এবং সেই কামরানোর জায়গা থেকে রক্ত বের হয় বা ক্ষত হয়ে যায় গভীরভাবে তাহলে অবশ্যই ভ্যাকসিন নিতে হবে। আবার যদি কামড়ানোর ফলে সেটা কাপড়ে বা জুতায় লাগে বা পায়ের কোন বা শরীরে কোনো কেটে না গিয়ে থাকে তাহলে ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার
বিড়ালের জলাতঙ্ক হলে জ্বর আসবে এবং প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। যদি বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগ হয়ে থাকে এক্ষেত্রে যদি বিড়ালের মুখ দিয়ে লালা পরে এবং বিড়াল যদি আক্রমণকারী হয়ে যায় পাগলের মত আচরণ করে বা বলা যায় স্বাভাবিক আচরণের থেকে ভিন্ন ধরনের আচরণ করে তাহলে বুঝতে হবে বেড়ালের জলাতঙ্ক রোগ হয়েছে।
বিড়ালের জলাতঙ্ক হলে এর কোন চিকিৎসা নেই কিন্তু প্রতিশেধেক আছে। বিড়ালকে ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক দেয়ার মাধ্যমে বিড়ালকে বাঁচানো যায়।
পরিশেষে বলা যায় যে, সচেতনতার মাধ্যমে আমরা এরূপ থেকে বাঁচতে পারি। বেড়াল বা কুকুরের কাছাকাছি না গিয়ে বা তাদেরকে উত্তেজিত না করে আমরা এ রোগ হওয়া থেকে প্রতিরোধ করতে পারি। এবং আমাদের চলাফেরার সময় অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে কুকুর বিড়াল দেখলে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন