নিম পাতার ব্যবহার ও মুখে নিম পাতার ব্যবহার জেনে নিন

সুপ্রিয় দর্শকবৃন্দ আজকে আমরা জানবো নিমপাতার ব্যবহার ও মুখে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে। সারা পৃথিবীতে নিমপাতাকে ঘরের ডাক্তার বলে।আর নিম পাতা যে ঘরের ডাক্তার এক্ষেত্রে কারো কোন সন্দেহ নেই নিম পাতার উপকারিতার কারণে।

নিম পাতার ব্যবহার ও মুখে নিম পাতার ব্যবহার

নিমপাতা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। এই পাতায় রয়েছে এন্টি ফাঙ্গাল ও আন্টি ভাইরাল যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো শক্তিশালী করে তোলে।

নিম পাতায় রয়েছে রোগ প্রতিরোধকারী ক্ষমতা যা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে মুখের ব্রণ মুখের দাগ দূর করতে।


ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার

ব্রণের জন্য নিমপাতার ব্যবহার করতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের ব্রণ কে ভিতর থেকে ওঠা বন্ধ করতে হবে। এজন্য আমাদের ব্রণ কেন হয় তা আগে  নির্ণয় করতে হবে।

সাধারণত রক্তের ইনফেকশনের কারণে ব্রণ বেশি হয়ে থাকে। তাই রক্তের ইনফেকশন দূর করতে আমাদের নিম পাতার রস হাফ টেবিল চামচ অথবা নিমপাতা  একদিন ৭ দিন চাকরি করে পাতা চিবিয়ে খেতে হবে। এর ফলে আমাদের রক্তের ইনফেকশন দূর করে ব্রণ উঠা ভেতর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে। 

ব্রণ দূর করতে আমরা নিম পাতা বেটে মুখে লাগালেও খুব দ্রুত ব্রণ ওঠা বন্ধ হয় এবং মুখে ব্রণের দাগ থাকলে সেটা সাড়াতে নিম পাতার ভূমিকা অতুলনীয়। আবার নিম পাতার পেস্ট নিম পাতার সাবান এটিও খুবই কার্যকরী ব্রণ দূর করতে।

এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার

এলার্জির কারণে ভোগে থাকেন অনেকেই। এলার্জির কি যন্ত্রনা তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। এলার্জি দূর করতে নানা রকম চেষ্টা অনেকেই করে থাকেন এবং চোখের সামনে সুস্বাদু খাবার চোখের সামনে থাকলেও তা খেতে পারেন না শুধুমাত্র এলার্জির ভয়ে। 

যার কারণে আমাদেরকে ভুগতে হয় পুষ্টিহীনতায়। কিন্তু তবুও দূর করা যায় না এলার্জি। এলার্জিকে দূর করতে হলে মেনে চলতে হবে কিছু বিশেষ নিয়ম এটা অনেকেই বলে থাকে কিন্তু বিশেষ নিয়ম গুলো মেনে চলা যায় না সব সময় এর কারণে এলার্জি ও দূর হয় না।

আমি আপনাদের জানাবো কিভাবে নিম পাতার সঠিক ব্যবহারে এলার্জি চিরতরে দূর হয়ে যায়। নিমপাতা যে এলার্জি দূর করে এটা কম বেশি আপনারা সবাই জানেন কিন্তু সঠিক ব্যবহার সবাই করেন না বা জানেন না।

এলার্জির জন্য নিম পাতার কিভাবে ব্যবহার করব তা আমি এমনি বর্ণনা করলাম। প্রথমে ১ কেজি পরিমাণ নিম পাতা ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। এরপর শুকনো নিমপাতা পাটা বা কোন মিক্সার এর ভালো করে পিষে গুড়ো করে নিন। এরপরে এটি একটি ভালো পরিষ্কার কৌটায় ভরে রাখুন।

এরপর চা চামচের তিনভাগের এক ভাগ গুরো এক চা চামচ ইসবগুলের ভুষি সহ এক গ্লাস পানিতে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ভালোভাবে চামচ দিয়ে মিশিয়ে নিবেন। এই পানিটা প্রতিদিন খালি পেটে সকালে একবার দুপুরে ভরা পেটে একবার ও রাতে শোয়ার আগে একবার খেতে হবে এভাবে টানা ২১ দিন খেতে হবে তাহলে চিরতরে নির্মূল হবে এলার্জি। এলার্জিতে নিমপাতা একটি খুব কার্যকরি ঔষুধ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার

যারা চুলকানিতে ভোগেন তারা চিন্তা করবেন না। চুলকানি একটি ফাঙ্গাল ইনফেকশন যা আমাদের বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে। চুলকানিতে কিন্তু নখ দিয়ে ঘষাঘষি করা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ এটি খুব তাড়াতাড়ি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।

গবেষকগণ বলেছে যেখানে আমাদের চুলকানি সেখানে আমরা ইচ্ছা বা অনেক সময় অনিচ্ছাকৃত ভাবে দিনে নিম্নে ৮০ বার চুলকান। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চুলকানি দূর করা উচিত। আর এর জন্য কার্যকরী উপাদান হচ্ছে নিম পাতা।

চুলকানি দূর করতে হলে প্রথমেই আমাদের লাগবে নিম পাতার পেস্ট এক চা চামচ। তার সঙ্গে হাফ চা চামচ হলুদ। হলুদের মধ্যে থাকে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের ইনফেকশন জনিত সমস্যাকে একেবারে দূর করে দেয়। 

এই পেস্ট খুব ভালোভাবে মিশিয়ে আমাদের চুলকানির জনিত স্থানে লাগিয়ে আধাঘন্টা থেকে এক ঘন্টা পর্যন্ত রাখতে হবে এরপর এটি পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে এভাবে নিয়মিত সাত দিন ব্যবহারের ফলে আমাদের চুলকানি চিরতরে নির্মূল হয়ে যাবে।

চুলকানি দূর করতে আমরা নিমপাতা সেদ্ধ করে সেই পানি গোসলের পানিতে দিয়ে গোসলও করতে পারি। আবার অনেকেই আছে নিম পাতার শুকিয়ে বেটে তা তেলের মধ্যে ভিজিয়ে রেখে শরীরে সেই তেল ব্যবহার করে এটিও একটি ভালো উপায় চুলকানি দূর করার।

চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার

শরীরের চর্মরোগে নিম পাতা ব্যবহারের বিকল্প নেই। শরীরে চর্মরোগ হয়েছে তাহলে আমরা নিমপাতা বেটে সেই স্থানে পেস্ট হিসেবে লাগাতে পারি। এর ফলে চর্মরোগ খুব তাড়াতাড়ি নিরাময় হবে।

আবার চর্মরোগ দূর করতে হলে আমাদের নিমপাতা সিদ্ধ করে সেটার পানি গোসলের পানিতে দিয়ে গোসলের মাধ্যমেও আমরা চর্মরোগ থেকে নিরাময় পেতে পারি।

নিমপাতা শুকিয়ে সেটা আমাদের গায়ে মাখার তেলের সঙ্গে ভিজিয়ে রেখে তা আমরা গায়ে ব্যবহার করেও চর্ম রোগ থেকে দূরে থাকতে পারি। চর্ম রোগ নিরাময়ে নিমপাতা একটি কার্যকরী বিশেষ উপাদন যা অনেক বিশেষজ্ঞেরা বলে গেছেন।

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা শেষ নেই। নিমপাতা একটি এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে আমাদের শরীরে। নিম পাতা এমন একটি ঔষধ যা হাজারো বছর ধরে স্বাস্থ্য সেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিমপাতা এখনো প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত করা হয়।

নিম পাতার উপকারিতা শরীরের দুর্বল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে নিম পাতার জুড়ি মেলা ভার। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও যেকোনো ধরনের দাগ ত্বকের ব্রণ দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে নিম পাতা। মাথার খুশকি এবং মাথায় উকুন নাশক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে একটি বিশেষ উপাদান হলো নিম পাতা। 

নিম পাতা সেবনের মাধ্যমে আমরা কঠিন রোগ হতে মুক্তি পেতে পারি। যেমন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে অনেকাংশে সহায়তা করে নিম পাতা। নিম পাতার সঠিক ব্যবহার আমাদের হৃদরোগের হাত থেকেও রক্ষা করে।

এটি বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে রক্তে সমস্যা বা রক্ত রোগীদের যাদের রক্ত ইনফেকশন অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা আছে তাদের জন্য একটি কার্যকরী উপাদান হলো নিমপাতা। 

নিম পাতা কিডনি ও লিভারের ক্ষতিকর টক্সিম বের করতে সহায়তা করে অনেকাংশে। নিম পাতা হজমের জন্য বিশেষ উপকারী। নিম গাছের ডাল দাঁতের পাইরিয়া ও দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা থেকে আমাদের রক্ষা করে।

কোন স্থানে মৌমাছি বা অন্য কোন বিষাক্ত পোকা ফুটলে সেই স্থানে নিম পাতার প্রলেপ দিলে তা খুবই কার্যকারী ভূমিকা পালন করে এটি সারাতে। নিমপাতা হলো হাজারো অসুখের চিকিৎসা।

নিম পাতার অপকারিতা রয়েছে অনেক যদি আমরা সঠিকভাবে তা ব্যবহার না করি। নিম পাতা আমাদের খালি পেটে বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। যা আমাদের শরীরের জন্য বয়ে আনতে পারে ভয়ানক বিপদ।

নিম পাতা খেতে বা নিম পাতার রস খেতে গেলে অনেকেরই বমি বমি ভাব পায় বা বমি  হয়ে থাকে। এই সমস্যা যদি প্রতিবারই হয়ে থাকে তাহলে আপনার নিম পাতা সেবন করা উচিত নয়। গর্ভবতী মহিলাদের নিমপাতা এড়িয়ে যাওয়া উচিত কারণ এটি গর্ভপাতের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।


মুখে নিম পাতার ব্যবহার

মুখে নিম পাতার ব্যবহার নানাভাবে করা যায়। নিম পাতা মুখের সৌন্দর্য ধরে রাখতে এটি জাদুকরি ভূমিকা পালন করে। নিম পাতা বেটে মুখে প্রলেপ হিসেবে লাগালে মুখের ব্রণ দূর হবে। মুখে মেছতা থাকলে সেগুলো খুব দ্রুত সেরে যাবে নিম পাতা ব্যবহারের ফলে।

নিম পাতার সাবান ব্যবহার করলে আমরা নানা রকম মুখের ব্রণ ও এলার্জি থেকে দূরে থাকতে পারি। নিমপাতা নিয়মিত মুখে লাগালে সেটি মুখে বয়সের ছাপ এবং মুখের বলিরেখা দূর করে মুখে ফুটিয়ে তুলবে উজ্জ্বলতা।

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয়

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ দুটি খুব কার্যকরী উপাদান মুখের জন্য। আর এই দুটি যদি একখানে হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই এটি হয়ে যাবে রাজ জোটক এর বিশেষ গুণাবলীর কারণে।

নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে মুখে ঘামাচি ফুসকুড়ি ব্রণ এগুলো দূর হবে এবং মুখের উজ্জ্বলতা অনেক গুণ বেড়ে যাবে ও বলি রেখা দূর হবে এর ফলে মুখে বয়সের ছাপ ও পড়বে না নিমপাতা খুবই কার্যকর আমাদের মুখের জন্য।

নিম পাতার ক্ষতিকর দিক

নিম পাতার ক্ষতিকারক দিক তেমন নেই বললেই চলে তবে যদি এটি খেতে গিয়ে বমি পায় বা বমি বমি ভাব আসে এক্ষেত্রে এটি জোর করে খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত হয় যেতে পারে এটি নিয়মিত সেবনের ফলে।

পরিশেষে বলা যায় যে নিমপাতা ক্ষতির থেকে উপকারটা অনেক বেশি এটি আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ যদি আমরা সঠিক ব্যবহার করি। নিম গাছ থেকে শুরু করে নিম পাতা, শিকড়, ফুল ফল, ডাল সব কিছুই আমাদের সুস্থ রাখতে ভালো রাখতে অনেক বেশি সাহায্য করে। তাই একে ঘরের ডাক্তার বলে থাকে বিশেষজ্ঞগণ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন