সুপ্রিয় দর্শকবৃন্দ, রাতে ঘুমানো এই কাজটি শুধুমাত্র আপনার দৈনিক রুটিনের অংশ নয় বরং এটি আপনার সম্পূর্ণ উন্নতির কারন। যেমন আপনার লম্বা আপনার ব্যক্তিত্ব আপনার ডাইজেশন এবং আপনার ব্রেনের উন্নতির কারণ হলো এই ঘুম।
অনেক সময় আমরা আমাদের নিজের জীবনে এতটাই ব্যস্ত হয়ে যাই যে সঠিকভাবে ঘুমাতে পারি না। আবার অনেক সময় তো এমনও হয় যে আমরা তিন থেকে চার ঘন্টা ঘুমিয়ে আমাদের ঘুম পূরণের চেষ্টা করি।
তবে এমনটি যদি আপনি মাঝে মধ্যেই করে থাকেন তাহলে আপনি জেনে রাখেন যে এটা আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের অবনতি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দিচ্ছে। তাহলে যদি আপনি সারাদিন এনার্জিতে পরিপূর্ণ থাকতে চান, এবং আপনার ব্রেনের ক্ষমতাকে আরো বাড়াতে চান তাহলে ঘুম আপনার অবশ্যই প্রয়োজন। তাই বলে এই নয় যে আপনি সারাক্ষণ ঘুমিয়ে থাকবেন।
তাছাড়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার ঘুমের ধরন। আপনি হয়তো দেখেছেন কিছু কিছু লোক রাতে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা ঘুমিয়ে থাকেন কিন্তু তবুও তাদের মধ্যে এনার্জিতে পরিপূর্ণ থাকে কিন্তু অপরদিকে কেউ আট হতে দশ ঘন্টা ঘুমায় তবুও সারাদিন ঘুম পায় বা শরীর অলস হয়ে থাকে আসলে এরকম হওয়ার একমাত্র কারণ হলো ঘুম। ঘুমের ধরন ভালো না হওয়ার কারণে সারাদিন এসব মানুষের ঘুম পায় বা অলসতা লেগে থাকে।
মানুষ তার জীবনের এক তৃতীয়াংশ বলতে যদি আপনি 75 বছর বাঁচেন তাহলে তার মধ্যে ২৫ বছরই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেন। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না যে আপনি যতটা পরিমাণ ঘুমান তা নির্ধারণ করে আপনার বয়স। আপনার বয়স আপনাকে সংকেত দেয় যে আপনার কতটা পরিমান ঘুমানো প্রয়োজন।
রাত জাগা সম্পর্কে ইসলামিক কিছু বর্ণনা
রাতে ঘুমানো প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা'আলা সূরা নাবাতে বলেছেন আমি ঘুমকে বানিয়েছি তোমাদের বিশ্রামের জন্য। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে বলেছেন হে আল্লাহ তুমি আমার উম্মতের সকালটাতে বরকত দাও।
এজন্য আপনি দেখবেন সকালে ফজরের পর যদি আপনি কাজ শুরু করেন। দেখবেন সেই কাজের অনেক বরকত রাত জেগে জেগে করার তুলনায়।যারা রাতে আগে ঘুমিয়ে যায় এবং ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়ে দেখবেন তাদের সারা জীবনটা বরকতে পরিপূর্ণ।
রাত জাগা ও দেরি করে ঘুমানোর ফলে যেসব প্রভাব পড়ে আপনার দেহে তা চিন্তাও করা যায় না। গত ৫০ বছরে মানুষের সামাজিক ও মানসিক চিন্তাভাবনার উন্নতির সাথে সাথে তাদের ঘুমও কমেছে অনেক বেশি। আর এটার আসল কারণ হলো ভার্চুয়াল ভাইরাস।
সোশ্যাল মিডিয়া ইন্টারনেট টিভি অনলাইন গেম এগুলো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে থাকাই জনগোষ্ঠী নষ্ট করে ফেলছে নিজেকে সৃজনশীল করে তোলার সবচেয়ে সহজ উপায়।প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা হলো ঘুম। রাত জাগা আর ঘুম থেকে দেরি করে ওঠা এটাই যেন এখন তাদের গর্বের ব্যাপার। অথচ রাতে ঘুম আর দিনে কাজ এটাই মানুষের সহজাত প্রকৃতি।
হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের পূর্বপুরুষেরা সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মধ্যে মিলিয়ে নিতেন তাদের কাজ আর ঘুমের চক্রকে। সূর্য তো তাদের কাজ করার জন্য আলো জোগাত আর সূর্যাস্তের পর যখন অন্ধকার হয়ে যেত তখন তারা ঘুমাতে যেতেন। কিন্তু এখন সূর্যাস্তের পরও আমাদের কাছে আলো থাকে।
থাকে কাজের বাইরে ও রাত জাগার অজস্র অজুহাত অসংখ্য আকর্ষণ। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে আমরা নিজেদের দেহের কি বারোটা না বাজাচ্ছি। রাত জাগা সম্পর্কে ইসলামে কিছু বর্ণনা আছে যে মহান আল্লাহ বলেছেন আমি দিন দিয়েছি তোমাদের কাজের জন্য আর রাত দিয়েছি তোমাদের বিশ্রামের জন্য।
রাত জাগা সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সার বিষয়ক গবেষণা বিভাগ ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি অফ রিসার্চ অন ক্যান্সারে তথ্য মতে যখন সূর্যের আলো থাকে না তখন শরীরকে কাজ করতে বাধ্য করা বা জাগিয়ে রাখা শরীরে ম্যাটালনিক হরমোন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে।
আরে মেলাটনিনই মানুষের দেহের টিউমারের বৃদ্ধিকে রোধ করে। গবেষকদের ধারণা রাত জাগা মানুষদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অর্থাৎ রাতের ঘুম খুবই প্রয়োজনীয় যা দিনের বেলা ঘুমিয়ে পূরণ করা যাবে না। রাতে দেরি করে ঘুমালে নেমে আসে বহু বিপদ শরীরে বাসা বাঁধে কঠিন সব রোগ।
যুক্তরাজ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চার লক্ষ তেত্রিশ হাজার মানুষের উপর জরিপ চালিয়ে দেখেন সকালে তাড়াতাড়ি উঠা ব্যক্তিদের চেয়ে রাত জাগা মানুষের অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা দশ শতাংশ বেশি। গবেষণায় দেখা যায় দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার কারণে বিভিন্ন মানুষের শারীরিক জটিলতার শিকার হতে হয়। আমাদের প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে রাতে দেরি করে ঘুমানো মানে নিজের শরীরে নিজেই রোগের বাসা তৈরি করা।
রাতে দেরি করে ঘুমালে যা হয়
- চোখের চারপাশে কালো দাগ তৈরি হয়।
- যৌন সমস্যা বা জটিলতা তৈরি হয়।
- ডায়াবেটিস বা রক্তের ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
- চুল পাকা ও চুল পড়ার সমস্যা দেখা দে অল্প বয়সেই।
- হার্টের সমস্যা বাড়ে।
- ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
- মাথা ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়, মানসিক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
- স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়।
- চেহেরায় বয়সের ছাপ পড়ে যায়।
- গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয় অলসতা বৃদ্ধি পায় ইত্যাদি বহু রোগ শরীরে বাসা বাধে।
রাতে দেরি করে ঘুমালে রোগ হয় কেন?
পরিমাণ মতো ঘুম পরিমাণ মতো খাবার পরিমাণ মাত্র বিশ্রাম একজন মানুষের শরীরকে ভালো রাখতে অতি প্রয়োজনীয়। কাজেই দিনে ঘুমানোর চেয়ে রাতে ঘুমানো হাজার গুণ বেশি প্রয়োজন। পরিমাণ মতো ঘুম পরিমাণ মতো বিশ্রাম খুবই প্রয়োজন আপনি পরীক্ষা করলে বুঝতে পারবেন।
রাতে যদি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যান তাহলে দেখবেন সকালে উঠে আপনার শরীর খুব ভালো লাগে। এবং আগের তুলনায় কাজ করার শক্তি বৃদ্ধি পায় অনেক বেশি এবং মনা ভালো থাকে। তবে যদি রাতে দেরি করে ঘুমান এবং সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠেন তাহলে দেখবেন সারাদিন শরীর খারাপ লাগছে।
তার অর্থ স্পষ্ট বোঝা গেল রাতের ঘুম দিনে পূরণ করা কখনোই সম্ভব নয়। তাহলে বোঝা গেল যে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে ও আমাদের সারা দিনের কার্যক্রম সঠিকভাবে চালাতে হলে আমাদের অবশ্যই পরিমাণ মতো সঠিক সময়ে ঘুমাতে হবে।
রাত জাগলে যে ১৮ টি বড় বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়
রাত হলো অন্ধকার অস্পষ্টতা সূর্যের আলো যখন অস্ত যায় তখন নেমে আসে রাত। আসসালস সিজিল এর মতে সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরেই মানুষের শরীরে ঘুমের হরমোন গুলো কাজ করতে শুরু করে মানুষ যদি রাতের প্রথম অংশে না ঘুমায় তাহলে ক্যান্সার ডায়াবেটিস হৃদরোগ বিষন্নতা সহ নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে।
রাতের প্রথম অংশে ঘুমালে খুব সহজে এই রোগ গুলো শরীরের বাসা বাঁধতে পারে না। ইচ্ছাকৃত আর অনিচ্ছাকৃত যেভাবেই হোক না কেন রাত জাগা এক ধরনের অভ্যাস হয়ে গেছে প্রত্যেকেরই। আরো অনেকেই এখন রাত জেগে কাজ করি আর ভোর হলে ঘুমাতে যাই।
আমরা অনেকেই আবার এটা খুব বেশি পছন্দ করি। বিশাল কর্মব্যবস্হায় এই ব্যস্ত নগরীতে আমরা এখন ভুলে যাই নিজের যত্ন নিতে। আর পরিণতি অকাল মৃত্যু অল্প বয়সে বুড়িয়ে যাওয়া ও বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়া।
রাতে কম ঘুমালে আমরা যেসব বড় ক্ষতি বা সমস্যার মুখে পড়বো তা নিচে দেওয়া হল:
- ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া বা বেশি খাওয়া। যার পরিণতি হল অবিসিটি বা স্থূলতা।
- স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায় চার গুণ ও অন্যান্য হৃদ রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
- ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- মস্তিষ্কের টিস্যুও নষ্ট হওয়ার শুরু করে।
- ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তিও কমতে শুরু করে।
- এসিডিটি যেটা পাকস্থলীতে আলসারের রূপ নেয় রাত জাগার ফলে।
- কর্মের ধারাবাহিকতা বিপর্যস্ত হয় এবং কর্ম চঞ্চলতা হ্রাস পায়।
- কোন ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়াটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
- সারাদিন একটা ক্লান্তি অনুভূতি হয়।
- গ্যামিট কম তৈরি হয় ফলে রিপ্রোডাকশন সিস্টেমের ফার্টিলিটি কমে যায়।
- উচ্চ রক্তচাপ প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়।
- চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যায়।
- ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ পড়ে ও ত্বকের রং নষ্ট হয়।
- চামড়া দ্রুত কুঁচকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
- শরীরের পেশি হারিয়ে যায় রাত জাগার ফলে।
- নারীদের মধ্যে মেদবহুল পেট এবং মেটাবলিক সিনড্রোম হতে দেখা যায় বেশি।
- স্তন স্ক্যান্সার এবং প্রটেস্ট ক্যান্সারের মতো ক্যান্সারের কোষ গঠন হয়ে থাকে অতিরিক্ত রাত জাগার ফলে।
সর্বশেষ কথা
বিজ্ঞানীরা বলেছেন ঘুমের মধ্যে মানুষের স্মৃতি তৈরি হয় বিশেষ করে হালকা ঘুমের মধ্যে। কিন্তু একটানা দীর্ঘ ঘুম সে প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়। রাত জাগার বদ অভ্যাস যারা গড়ে তুলেছেন তাদের মধ্যে ৯০ জন বিভিন্ন মানসিক সমস্যার শিকার হয়।
তাই আমাদের শরীর যেভাবে সুস্থ থাকবে তা হলো অবশ্যই রাত জাগা অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।অনেকদিন তারুণ্য ধরে রাখতে হলে ঘুমের কোন বিকল্প নেই। নিয়ম মেনে ছয় থেকে আট ঘন্টা ঘুমালে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়।
ঘুম বিশেষজ্ঞরা এসব সমস্যার কিছু সমাধান বলেছেন যা হল আপনার শোয়ার জায়গাটা এমন হতে হবে যেখানে সূর্যের আলো সহজেই পৌঁছায় কিন্তু রাতের বেলা অন্ধকার থাকে। প্রতি রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় যাওয়া অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে রাত যেন খুব বেশি না হয়।
সুস্থভাবে জীবন যাপনের জন্য যে অভ্যাসগুলো গড়ে তোলা প্রয়োজন সেগুলো আয়ত্তে আনতে নিজের প্রতি কঠোর হওয়া। ঘুমের সময়ের সঙ্গে কোন অবস্থাতে আপোষ না করা। দিনের কাজ দিনের মধ্যেই শেষ করে ফেলা। ঘুমের সময় মোবাইল বা ল্যাপটপ বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার থেকে দূরে থাকা। তাহলেই আপনি সুস্থ থাকবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন