হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে করনীয় কি তা জানুন

যেহেতু আপনি হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে করনীয় এই টাইটেল পড়ে আমার আর্টিকেলের ভেতরে এসেছেন সেহেতু বোঝা যায় যে আপনি হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে করনীয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। যদি এমনটা হয় তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন।

হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে করনীয় কি তা জানুন

কারণ আমি হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে করনীয় এই আর্টিকেলে হেপাটাইসিস বি নেগেটিভ করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। তাই হেপাটাইসিস বি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে আমার লেখা আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মন দিয়ে পড়ুন।

হেপাটাইটিস বি কি করে

হেপাটাইটিস বি এই রোগের নাম আমরা অনেকেই শুনেছি কিংবা জানি। কিন্তু আমরা অনেকেই এই রোগের সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তেমন কিছুই জানিনা। অনেকে এটাও জানে না হেপাটাইটিস বি কিভাবে ছড়ায় এবং তার ফলে কি কি সমস্যা হয়। হেপাটাইটিস বি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে থাকে। 

যার শেষ পরিণতি বলা যেতে পারে মৃত্যু। অনেক সময় দেখা যায় এ রোগে আক্রান্ত রোগীর আক্রান্ত হওয়ার পর লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু সময় এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীর সাথে সাথে লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় ৩০ থেকে শুরু করে ১৮০ দিন এর মধ্যে।

এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা সাধারণত জন্মের পর বেশি দেখা যায়। হেপাটাইটিস বি এই রোগ রক্ত অথবা দেহ থেকে নিঃসৃত তরল এর সাহায্যে ছড়িয়ে থাকে। হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 

এছাড়াও যে সকল জায়গায় হেপাটাইটিস বি রোগের প্রকোপ অনেক বেশি দেখা যায় সে সকল জায়গায় যদি কোন শিশুর জন্ম হয় তাহলে সেই শিশু এ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও শরীরের শিরায় মাদক দ্রব্য গ্রহণ করা এবং ও সতর্কভাবে যৌন মিলন এর কারণে এই রোগে অনেক বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। 

এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কিন্তু আস্তে আস্তে কিছু কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। সর্বশেষ দেখা যায় সেই ব্যক্তি সিরোসিস অথবা যকৃতের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে।

হেপাটাইটিস বি কি ভাল হয়

হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েন এ রোগ থেকে কিভাবে মুক্তি পাবে। হেপাটাইটিস বি এমন এক ধরনের রোগ যেই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোন রকম এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হয় না। যে সকল ব্যক্তির শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি সে সকল ব্যক্তি এই রোগের হাত থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পায়। 

বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় যে ৯০% মানুষ কোন রকম ঔষধ ছাড়াই এই রোগ সেরে যায়। কারণ সে সকল ব্যক্তির শরীরে প্রাকৃতিকগতভাবেই হেপাটাইসিস বি রোগের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। যা সেই ব্যক্তির শরীরকে হেপাটাইটিস বি রোগ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে শরীর এ রোগের অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে না।

যদি কোন ব্যক্তির এই ভাইরাসটি ছয় মাসের বেশি রক্তে উপস্থিত থাকে তাহলে সেটিকে ক্রনিক হেপাটাইটিস বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে ১০০ % মানুষের মধ্যে ১০% মানুষের শরীরে এই জীবাণু সারা জীবন থেকে যায়। 

আর যখন এই ভাইরাস কোন ব্যক্তির শরীরে সারা জীবনের জন্য থেকে যায় তখন তাকে ক্রনিক হেপাটাইটিস বলা হয়ে থাকে। বিশেষ করে যদি কোন শিশু জন্মের সময় মায়ের কাছ থেকে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে সেই শিশুর এই রোগ সারা জীবন থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ

আপনাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে হেপাটাইটিস বি এটি কি কোনরকম ছোঁয়াচে রোগ। এই রোগ রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। এছাড়াও এ রোগে আক্রান্ত মায়ের দ্বারা সন্তান হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু কোনরকম ছোঁয়ার মাধ্যমে বা হেপাটাইসিস বি রোগে আক্রান্ত রোগীর সাথে একসাথে ওঠা বসা কিংবা চলাচলের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় না।

এই রোগ ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম হচ্ছে হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির যদি রক্ত গ্রহণ করা হয়। এছাড়াও অসতর্ক ভাবে যৌন মিলন এর কারণেও হেপাটাইসিস বি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কোন স্বামী যদি হেপাটিসিস বি রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে তার স্ত্রীর ও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাই।

যেহেতু হেপাটাইসিস এক ব্যক্তি হতে আর এক ব্যক্তির নিকট ছড়িয়ে পড়ে সেহেতু এটিকে ছোঁয়াচে রোগ বলা যেতে পারে। কিন্তু আপনাকে এটাও মনে রাখতে হবে যে শুধুমাত্র হেপাটাইসিস বি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ছোঁয়ার কারণে এই রোগ এক ব্যক্তি হতে অন্য ব্যক্তির নিকট ছড়িয়ে পড়ে না।

হেপাটাইটিস বি হলে কি বিয়ে করা যায়

হেপাটাইসিস বি রোগে আক্রান্ত হলে কখনোই যে বিয়ে করা যাবে না এমনটা কিন্তু নয়। কিন্তু অবশ্যই আপনি যদি হেপাটাইসিস বি পজিটিভ হন তাহলে এটি প্রথমে আপনার হবু বধুকে জানাতে হবে। আপনি যদি বিয়ে করতে চান তাহলে অবশ্যই প্রথমে আপনাকে আপনার হেপাটাইসিস বি নেগেটিভ করার চেষ্টা করতে হবে। 

তাছাড়াও বিয়ে করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ আপনি যদি হেপাটাইসিস বি পজেটিভ অবস্থায় বিয়ে করেন তাহলে এতে আপনার স্ত্রী ও পজেটিভ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তাছাড়াও আপনার সন্তান ও পজেটিভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

তাই অবশ্যই বিয়ে করার পূর্বে হেপাটাইসিস নেগেটিভ করার চেষ্টা করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি এবং আপনার স্ত্রী টিকা গ্রহণ করতে পারেন। আমার মতে হেপাটাইসিস বি পজেটিভ হলে প্রথমে আপনার দায়িত্ব হবে সেটি থেকে বের হয়ে বিয়ে করা।

হেপাটাইটিস বি হলে কি কি খাওয়া নিষেধ

হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই আপনাকে কিছু খাদ্যাভাস মেনে চলতে হবে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর বেশি বেশি তেল মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া কখনোই উচিত নয়। এই রোগে আক্রান্ত রোগীকে তরল জাতীয় খাবার যেমন গ্লুকোজ, শরবত, আখের রস অথবা কচি ডাবের জল জাতীয় পানীয় বেশি বেশি পান করতে হবে। 

এছাড়াও ফলমূল ও শাকসবজি বেশি বেশি করে খেতে হবে। কিন্তু কোন ব্যক্তি যদি হেপাটাইসিস বি পজিটিভ হয় তাহলে বেশি মসলা যুক্ত করে খাবার খাওয়া যাবে না। এছাড়াও অতিরিক্ত ফ্যাট হয় যে ধরনের খাবারে সে সকল খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষ করে চর্বি জাতীয় খাবার গুলো খাওয়া যাবে না। হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে অ্যালকোহল খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।

হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা

এটি একটি এমন রোগ যাতে আক্রান্ত হয়ে একসময় অনেক মানুষ মারা গেছে। বর্তমানে এই রোগটিতে আক্রান্ত হতে বেশি এশিয়া ও সাব সাহারা এবং আফ্রিকার মানুষদের দেখা যায়। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে যে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর ৭.৫ লাখের থেকেও বেশি মানুষ মারা গেছে। 

তার মধ্যে মারা যায় ৩ লাখ মানুষ যকৃতের ক্যান্সার হয়ে। এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সরকারিভাবে জন্মের পর বাচ্চাদের টিকা প্রধান করা হয়ে থাকে। ১৯৮২ সাল থেকে এই টিকার মাধ্যমে এই রোগ কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। এই রোগের ক্ষেত্রে ৯৫% টিকা কাজ করে।

হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসাঃ

যদি কোন শিশু হেপাটাইটিস বি এ আক্রান্ত হয় তাহলে সেই শিশুটিকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে এ রোগের হাত থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। হেপাটাইটিস বি এই রোগের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে এক ধরনের এন্টিবডি তৈরি হয় যা হেপাটাইসিস বি এর ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে তাকে ধ্বংস করে ফেলে। 

যে সকল ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি সে সকল ব্যক্তির ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় যে কিছুদিন পর হেপাটাইটিস বি নিজে থেকেই নেগেটিভ হয়ে গেছে। কিন্তু এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির অবশ্যই চিকিৎসকের নিকট গিয়ে তার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হবে। 

বাজারে কিছু কিছু ইনজেকশন এবং মুখে খাওয়ার ঔষধ পাওয়া যায় যা হেপাটাইসিস বি এর প্রভাব কমিয়ে আনতে পারে। কিন্তু একেবারেই নির্মূল হবে এমন ওষুধ এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নাই।

হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে করনীয়

হেপাটাইটিস বি এই রোগটিকে প্রাণঘাতী ব্যাধিও বলা যাই। এটি এমন এক ধরনের ব্যাধি যা নিশ্চুপভাবে যেকোনো ব্যক্তিকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে নিয়ে যেতে পারে। কারণ এই রোগের লক্ষণগুলো আস্তে আস্তে এবং দেরিতে প্রকাশ পায়। 

তাই হেপাটাইসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার অনেকদিন পরে মানুষ বুঝতে পারে যে তার হেপাটাইসিস বি পজেটিভ হয়েছে। এই রোগ একেবারে শেষ হয়ে যাবে এরকম ঔষধ এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। কিন্তু বাজারে কিছু কিছু ঔষধ ও ইনজেকশন রয়েছে যা দ্বারা এ রোগ কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব। 

কিন্তু এই রোগের যদি চিকিৎসা না করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে মারাত্মক আকার ধারণ করবে এবং রোগী মৃত্যুবরণ করবে। তাই অবশ্যই হেপাটাইটিস বি পজেটিভ হলে সেটি অবহেলা না করে সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

করনীয়ঃ প্রথমে আপনাকে জানতে হবে হেপাটাইসিস রোগের লক্ষণগুলো কি কি। কোন লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে আপনাকে হেপাটাইসিস পরীক্ষা করাতে হবে। হেপাটাইটিস বি পজেটিভ হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে কোনরকম উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে। কিন্তু আস্তে আস্তে কিছু কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়।

  যেমনঃ

  • ক্ষুধা মন্দা
  • ক্লান্তি ভাব
  • ত্বক ও চোখ হলুদ বর্ণ
  • হালকা জ্বর
  • শরীর ব্যথা
  • ফ্যাকাসে বর্ণের পায়খানা
  • অস্থির সন্ধিতে ব্যথা
  • জন্ডিস
  • গাঢ় বর্ণের প্রসাব
আপনার যদি উপরে উল্লেখিত লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তাহলে অবশ্যই আপনাকে হেপাটাইটিস পরীক্ষা করাতে হবে। পরীক্ষা করার পর যদি আপনার হেপাটাইটিস বি পজেটিভ হয় তাহলে চিকিৎসকের নিকট পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হবে। 

এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম করতে হবে। আপনার খাদ্যাভাসের মধ্যেও পরিবর্তন আনা জরুরী। হেপাটাইটিস বি এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে টিকা গ্রহণ। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে যে এক্ষেত্রে টিকা ৯৫% পর্যন্ত কাজ করে। তাই এখন জন্মের পর ছোট বাচ্চাদের হেপাটাইসিস এর টিকা প্রদান করা হয়ে থাকে।

শেষ কথা

আশা করছি আপনারা আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে বুঝতে পেরেছেন হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে করণীয় গুলো কি কি। এছাড়াও হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে এর চিকিৎসা কি। এরকম আরো তথ্য পেতে নিয়মিত আমার লেখা আর্টিকেল গুলো পড়ুন এবং নিয়মিত দ্যা বর্ষা ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। 

আপনারা আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করতে পারেন। আপনি আপনার যেকোন প্রশ্ন আমাকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আমি আপনাদের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পুরোপুরি চেষ্টা করব।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন