প্রিয় বন্ধুরা আপনারা হয়তো জন্ডিসের কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু পাচ্ছেন না। আপনাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আজকে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব এবং আরো আলোচনা করবো জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব ইত্যাদি নিয়ে। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে সম্পূর্ণ পোস্টটি বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
রসুন আমাদের দেহের জন্য খুবই উপকারী। এ পোস্টে আমরা আরো জানব জন্ডিস টেস্টের নাম, জন্ডিস হলে যে সকল খাবার খাওয়া যাবেনা, জন্ডিস রোগীর খাবারের তালিকা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
বিলিরুবিনের বৃদ্ধির কারণে জন্ডিস রোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। দেশব্যাপী জন্ডিস রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।জন্ডিসের কারণ থেকে চোখ হলুদ, প্রসাব হলুদ হয়ে যায় ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।হেপাটাইটিস ভাইরাসের কারণে জন্ডিস রোগে সৃষ্টি হয়। আমরা এ পোস্টে আরো কিছু বিষয় আলোচনা করব সেগুলো হলো জন্ডিস টেস্টের নাম, জন্ডিসের লক্ষণ ও জন্ডিস থেকে মুক্তি পাবার উপায়। সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়া যাক।
জন্ডিসের কারণ ও লক্ষণ
জন্ডিস রোগে সম্পর্কে সবাই জানে কিন্তু এ রোগটা কেন হয় এবং এর লক্ষণ গুলো কি কি এই সম্পর্কে সকলের ধারণা একটু কম। তাহলে মনোযোগ সহকারে পড়ে জন্ডিসের কারণ ও লক্ষন সম্পর্কে পরে জ্ঞান নিন।আমাদের দেহে বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি হলে জন্ডিসের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। আমাদের দেহে পরিপাকতন্ত্রের কোন ব্যাঘাত ঘটার কারণে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়।
অনেকেই তেল মসলার যুক্ত খাবার খেতে পছন্দ করে। তেল মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে জন্ডিসের আক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। লিভারের কোন সংক্রমণ সৃষ্টি হলে জন্ডিস রোগ হয়ে থাকে। মদ্য, সিগারেট বা ধূমপান জাতীয় জিনিস খাওয়ার ফলে মানুষ জন্ডিস আক্রান্ত হয়। হেপাটাইটিস ভাইরাসের কারণে মানুষ জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হয়।
কিডনির সংক্রমণের কারণে অনেক সময় জন্ডিস রোগ সৃষ্টি হতে পারে। ম্যালেরিয়া রোগের থেকে জন্ডিস রোগ সৃষ্ট হতে পারে। পিত্ত থলিতে টিউমার ও অগ্নাশয়ে টিউমার হলে অনেক সময় জন্ডিস রোগ হয়ে থাকে। এভাবেই নানান উপায়ে জন্ডিস আমাদের দেহে প্রবেশ করতে পারে চলুন। তাহলে এবার জন্ডিসের লক্ষণ গুলি সম্পর্কে ধারণা যাক।
জন্ডিসের লক্ষণ গুলো হলোঃ
- জ্বর জ্বর ভাব
- বমি বমি ভাব
- প্রস্রাব হলুদ হয়ে যাওয়া
- চোখ ও ত্বক হয়ে যাওয়া
- খাওয়ায় অরুচি
- মাছ-মাংসে আসতে গন্ধ লাগা
- কোনো কোনো সময় রক্ত বমি হওয়া
- তল পেট ব্যথা করা
- চুলকানি সৃষ্টি হয়
- শরীর দুর্বলতা
- যকৃতিসক্ত হয়ে যায়
- ওজন কমতে থাকা
জন্ডিস টেস্ট নাম
আমরা প্রতিটি মানুষই জন্ডিস রোগের নাম শুনে অজ্ঞাত। জন্ডিস অন্য রোগের ধারাবাহিকতা বহন করে। কয়েকবার যদি জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে এই রোগ জন্ডিস থেকে বড় ধরনের রোগের সৃষ্টি হতে পারে। আবার অনেকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে দু একটা লক্ষণ দেখে মনে করে।
জন্ডিস হয়ে গেছে তারপরে ওষুধ গ্রহণ করে কিন্তু এটা ঠিক নয়। টেস্ট করার পর পজিটিভ রেজাল্ট আসলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করা উচিত নতুবা নয়। তাহলে চলুন দেখা যাক কোন কোন টেস্ট করার ফলে আমরা বুঝতে পারবো যে আমরা জন্ডিসের আক্রান্ত হয়ে পড়েছি।
জন্ডিসের টেস্ট এর নাম গুলো হলোঃ
- SGOT
- SGPT
- Serum bilirubin
জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব
বাংলাদেশের প্রচুর পরিমাণে জন্ডিসের আক্রান্ত রুগি আছে। বড় ছোট প্রায় সবাই এই রোগের নাম শুনে অভ্যস্ত। জন্ডিস একটি রোগ নয় এটি আসলে রোগের লক্ষণ বলে জানা গেছে । পরিচিত রোগের হলো জন্ডিস। জন্ডিস মারাত্মক একটি লক্ষণ এই লক্ষণটি হওয়ার ফলে বড় বড় রোগ সৃষ্টি হতে পারে আমাদের দেহে। স্বাস্থ্য যেমন আছে অসুখ ও তেমন হবে এটা বাস্তব কথা।
এই রোগের তালিকায় জন্ডিস প্রায় হয়ে থাকে মানুষের। রক্ত বিলিরুবিনের পরিমান বেশি হলে জন্ডিস দেহে বাসা বাঁধে। লিভার থেকে তৈরি পিত্ত রস আমাদের খাদ্য পরিপাকে অংশ নেয়। পরিপাকতন্ত্রের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরে আমার দেহে বর্জ্য মলের সাহায্যে দেহ থেকে নির্গত হয়। এই সময় বিভিন্ন সমস্যার কারণে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জন্ডিসের প্রভাব দেখা দেয়।
এই জন্ডিস থেকে অনেক সময় লিভারের রোগ সৃষ্ট হয়। জন্ডিসের বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে জন্ডিস হলে চোখ ও ত্বক হলুদ বর্ণ ধারণ করে। অনেকের মদ পান করে মদ্যপান করার ফলে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু ঔষধ সেবন করতে হয়। নিচে ওষুধগুলোর নাম দেওয়া হলো তবে ডক্টরের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না ডক্টরের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ গ্রহণ করবেন।
জন্ডিস টেস্ট এর নাম গুলো হলোঃ
- Avolac Syrup
- Bioliv Capsule
- Omidom Tablet
- Solvit B syrup
জন্ডিস হলে যে সকল খাবার খাবেন না
বন্ধুরা আপনারা হয়তো জন্ডিস রোগ সম্পর্কে জানেন কিন্তু অনেক সময় ধারণা করতে পারেন না যে জন্ডিস হলে কোন খাবার গ্রহণ করা যাবে না এবং কোন খাবার গ্রহণ করা যাবে। এই সম্পর্কে ধারণা পেতে পোস্টটি ভালো করে পড়ুন। ছোট থেকে বড় সব বয়সী মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।বিলিরুবিনের পরিমাণ বেশি হলে জন্ডিস রোগ হয়ে থাকে। জন্ডিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কিছু খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত।চলুন তাহলে দেখা যাক কোন খাবার জন্ডিস হলে গ্রহণ করা যাবেনা।
- গরুর মাংস খাবেন না
- পাতি হাঁসের ডিম খাবেন না
- অ্যালকোহল খাবেন না
- দুগ্ধজাত কোন খাবার খাবেন না
- পনির খাবেন না
- তেলে ভাজাপোড়া সিঙ্গারা সমুচা খাবেন না
- কফি খাবেন না
- জাঙ্ক ফুড খাবেন না
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা
জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হবার পর তার থেকে মুক্তি পাবার জন্য কিছু খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। যা খেলে আমরা দ্রুত জন্ডিস রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারবো। বাচ্চাদের জন্ডিসের জন্য দায়ী হেপাটাইটিস ভাইরাস। জন্ডিস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে চলুন সেগুলো দেখা যাক।
প্রোটিনঃ জন্ডিস রোগে শিকার হওয়ার কারনে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। তাই জন্ডিসে আক্রান্ত হলে অবশ্যই প্রোটিন খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। তাই জন্ডিসে আক্রান্ত হলেই মাছ মাংস খাওয়া দরকার।
পুদিনা পাতাঃ জন্ডিস আক্রান্ত হলে জন্ডিস সারানোর জন্য প্রতিদিন সকালে পুদিনা পাতা খাওয়া প্রয়োজন। তাই সকালে খালি পেটে উঠে পুদিনা পাতা বেটে রস করে সে রস ছেঁকে নিয়ে প্রতিদিন ২ টেবিল চামচ খাওয়া প্রয়োজন।
সবুজ শাকসবজিঃ জন্ডিসের আক্রান্ত রোগীদের তাজা শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। যেমন আলু, বাঁধাকপি ,ফুলকপি ,ব্রকলি, গাজর, মুলা ও টমেটো ইত্যাদি। তাই প্রতিদিনের খাতা তালিকায় যেন সবজি থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
লেবু খাওয়াঃ লেবু পাকস্থলীর জন্য খুবই উপকারী। তাই লিভারের জন্ডিস হলে লেবু খাওয়া প্রত্যেকটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মিষ্টি জাতীয় খাবারঃ জন্ডিসের আক্রান্ত হলেই মিষ্টি জাতীয়ও খাবার খাওয়া প্রয়োজন। আখের রস খাওয়ার ফলে জন্ডিস রোগের উপশম হয়। আখের রস পাওয়া না গেলে কুশলের গুড় খাওয়া উত্তম।
জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়
রোগ সৃষ্টি হতে কম সময় লাগলেও তা সারতে অনেক সময় লেগে যায়। জন্ডিস হলো পানিবাহিত রোগ যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে বড় ধরনেররোগ সৃষ্টি করতে পারে। জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করে চলতে হবে । তাহলে আমরা এই রোগমুক্তি পেতে পারি। বিলিরুবিনের বৃদ্ধির কারণে জন্ডিস হয়ে থাকে। প্রায় প্রতিটি মৌসুম পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে কিছু অসুখ এর প্রভাব দেখা দেয় এর মধ্যে জন্ডিস অন্যতম।
জন্ডিসের কিছু প্রকারভেদ আছে যা খুবই মারাত্মক।হেপাটাইটিস ভাইরাস বাচ্চাদের জন্ডিস এর জন্য দায়ী। জন্ডিসের আক্রান্ত হয়ে বাচ্চারা দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক বাচ্চা ছোটবেলার জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে মারাও যায়। তাই জন্ডিস থেকে মুক্তি পাবার জন্য কিছু উপায় করা উচিত। সেগুলো হলো নিয়মিত টাটকা শাক-সবজি গ্রহণ করতে হবে শাকসবজি গ্রহণ করার ফলে জন্ডিসের মতো রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। জন্ডিসে থেকে মুক্তি পাবার জন্য কুশরের রস ও কুশরের গুড় খাওয়া প্রয়োজন।
নিয়মিত খাদ্য তালিকায় লেবুর রাখা প্রয়োজন লেবুর জন্ডিসটিস রোগ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে। প্রতিদিন প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। দেহে প্রোটিনের অভাব দেখা দিলে জন্ডিসের প্রভাব বেড়ে যায়। নিয়মিত আদা রসুন রস খাওয়া প্রয়োজন আদা রসুন রস জন্ডিসের জন্য আদর্শ। নিয়মিত পুদিনা পাতা খাওয়া প্রয়োজন পুদিনা পাতা জন্ডিস রোগের জন্য বেশ কার্যকর। উপরের বিষয়গুলো নিয়মিত অনুসরণ করলে জন্ডিস রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
অবশেষে বলা যায়
জন্ডিস রোগ থেকে মুক্তি পাবার জন্য টাটকা শাকসবজি, প্রোটিন জাতীয় খাবার , থানকুনি পাতা, কুশরের রস গ্রহণ করতে হবে এর ফলে আমরা জন্ডিস থেকে মুক্তি পাব। জন্ডিসে আক্রান্ত হলে আগের টেস্ট করতে হবে তারপর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে। এভাবে প্রতিটি নিয়ম মেনে চললে জন্ডিস রোগ দ্রুত সেরে যায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন