সুন্দরবনের খাঁটি মধু চেনার উপায় সম্পর্কে আপনার যদি না জানা থাকে। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন। অনেকেই সুন্দরবনের খাঁটি মধু খেয়ে থাকে এবং দেখে থাকে। কিন্তু সুন্দরবনের খাঁটি মধু চেনার যে উপায় রয়েছে সেটা সম্পর্কে আপনাদের হইত তেমন কোনো ধারণা নেই। সেজন্য আমি আজকে একটি সঠিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো। তাই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন। তাহলে যারা মধু সংগ্রহ করে তাদের কি বলে, সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য, সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ, সুন্দরবনের খাঁটি মধু চেনার উপায়, সুন্দরবনের মধুর দাম, সুন্দরবনের মধুর উপকারিতা, এই সকল বিষয়ে সঠিক ধারণা পেয়ে যাবেন।
ভূমিকা
অনেকেই অনেক মধু খেয়ে থাকেন। তবে সুন্দরবনের খাঁটি মধু খেয়েছেন কখনো? এই মধু একমাত্র যারা খেয়ে থাকে তারাই বলতে পারবে কতটা সুস্বাদু। সুন্দরবনে যে খাঁটি মধু পাওয়া যায় সেই মধু বিভিন্ন রকমের ফুলের মিশ্রিত। সেজন্য এই সুন্দরবনের খাঁটি মধুর দামও অনেক বেশি। কিছু কিছু মানুষ মধু না চেনার জন্য অনেক সমস্যায় পড়েন।
তাই আজকে আমি এই আর্টিকেলে সুন্দরবনের খাঁটি মধু চেনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। যদি আপনার জানার আগ্রহ থাকে তাহলে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে সমস্ত বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে জানতে পারবেন।
সুন্দরবনের মধুর উপকারিতা
সুন্দরবনের মধু বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় খাদ্য। এই মধু বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন থেকে সংগ্রহ করা হয়। সুন্দরবনের মধু অন্যান্য মধুর তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টিকর এবং এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। সুন্দরবনের চাকের মধু দেশজুড়ে অনেক সুনাম রয়েছে। এই মধু অনেক সুস্বাদু ও খাটি মধু। এই মধুর ঘ্রাণ অনেক সুন্দর। যারা মধু প্রেমি রয়েছে তারা এই সুন্দরবনের চাকের খাঁটি মধুর কদর বুঝবেন। চলুন তাহলে আমরা কথা না বাড়িয়ে সুন্দরবনের মধুর উপকারিতা গুলো জেনে নিই।
অনিদ্রায়ঃ এই মধু অনিদ্রার জন্য অনেক ভালো একটি ওষুধ। রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানির সাথে ২ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে রাতের ঘুম অনেক সুন্দর হয়।
হজমের সহায়তাঃ এই মধুতে অনেক শর্করা রয়েছে। যা সহজেই হজম করতে সাহায্য করে। যাদের পেট রোগের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী এই মধু।
রক্তশূন্যতায়ঃ মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে বেশ সাহায্য করে ফলে এই মধু রক্তশূন্যতায় বেশ ভালো ভূমিকা রাখে।
শক্তি প্রদায়ীঃ শক্তি প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত ভালো একটি খাবার হচ্ছে মধু। এটি তাপ শক্তির ভালো একটি উৎস। মধু শরীরের তাপ শক্তি যোগাতে ও শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশ ভালো সাহায্য করে ।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেঃ মধু অত্যন্ত একটি উপকারী খাদ্য। এই মধু চোখের জন্য অনেক বেশি ভালো। যদি আপনি গাজরের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। তাহলে আপনার চোখের দৃষ্টি শক্তি অনেক বৃদ্ধি পাবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ মধু অত্যন্ত একটি উপকারী খাদ্য। মধুতে থাকে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স যা ডায়রিয়া দূর করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেশ সাহায্য করে। ভোরবেলা খাঁটি মধু যদি আপনি এক চামচ করে পান করতে পারেন। তাহলে আপনার কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়ে যায়।
প্রশান্তি দায়ক পানীয়ঃ মধু একটি প্রশান্তিদায়ক পানীয়। এটি হালকা কুসুম গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে করে খেতে পারলে অনেক আরাম পাওয়া যায়।
শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসে সমস্যা নিরাময়ঃ এই মধু ফুসফুস ও শ্বাসকষ্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্য। যাদের অ্যাজমার (শ্বাসকষ্ট) সমস্যা রয়েছে তাদের নাকের কাছে মধু ধরে হালকা করে শ্বাস উপরের দিকে টেনে নিলে সেটি অনেক স্বাভাবিক হয়। অনেক মানুষ মনে করেন যে এক বছরের পুরনো মধু শ্বাসকষ্ট রোগীদের জন্য অত্যন্ত ভালো।
পানি শূন্যতা দূর করেঃ যদি আপনার ডায়রিয়া হয়ে থাকে। তাহলে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলি-লিটার মধু মিশ্রণ করে খেতে পারেন। এতে করে আপনার শরীরের পানি শূন্যতা খুব দ্রুত দূর হয়ে যাবে।
মুখমণ্ডলের স্বাস্থ্য রক্ষায়ঃ স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যবহার করা হয় এই মধু। এছাড়াও দাঁতের জন্য অনেক ভালো। দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে। মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে যদি আপনি গড়গড়া করেন। তাহলে আপনার মাড়ির প্রদাহ দূর হয়ে যায়।
পাকস্থলীর সুস্থতায়ঃ এই মধু পাকস্থলী সুস্থতার জন্য বেশ ভালো সাহায্য করে। এছাড়াও হজমের কোন গোলমাল থাকলে দূর করে দেয়। বুক জ্বালাপোড়া, বমি বমি ভাব, এগুলো থাকলেও দূর হয়ে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এই মধু অত্যন্ত উপকারী। শরীরের বাইরে এবং ভেতরে যেকোনো ব্যাকটেরায় আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য অনেক বেশি ক্ষমতা যোগান দেয়। এই মধুতে রয়েছে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ এই মধু উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য অত্যন্ত ভালো। দুই চামচ মধুর সঙ্গে এক চামচ রসুনের রস মিশিয়ে যদি আপনি খেতে পারেন। তাহলে আপনার উচ্চ রক্তচাপ কমে আসবে। এটি সকাল সন্ধ্যা দুইবার মিশ্রণ করে খেতে হবে। প্রতিদিন সকালে নাস্তা করার এক ঘণ্টা আগে খেতে হবে। তাহলে খুব দ্রুত উচ্চ রক্তচাপ কমে আসবে।
হৃদরোগেঃ এই মধু হৃদরোগের টনিক হিসেবে বেশ ভালো কাজ করে। এক চামচ মৌরি গুড়ার সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারলে বেশ ভালো উপকার পাবেন। এটি হৃৎপেশিকে বেশি সবল করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।
রক্ত উৎপাদনের সহায়তাঃ মধুতে থাকা আয়রন রক্ত উৎপাদন করতে ভালো সাহায্য করে।
ওজন কমাতেঃ শরীরের ওজন কমাতে এই মধু খুবই উপকারী। এই মধুতে কোনোরকম চর্বি নেই বলে পেটের চর্বি কমায় এবং পেট পরিষ্কার রাখে।
কাশি ও সর্দি উপশম করেঃ এই মধু কাশি ও সর্দি দূর করার জন্য অতান্ত উপকারী। ছোট শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ সবার কম বেশি কাশি ও সর্দি দূর করতে সাহায্য করে।
উপরে সুন্দরবনের মধুর উপকারিতা সম্পর্কে সুন্দর একটি আলোচনা করেছি। এই সকল উপকারিতা মধুতে রয়েছে। তাই যদি আপনি এই মধু খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো। এছাড়াও এই মধু আপনার শরীর সুস্থ ও সবল রাখবে।
সুন্দরবনের মধুর দাম
পূর্বে আমরা আলোচনা করেছি যে সুন্দরবনের মধুর উপকারিতা সম্পর্কে। এখন আমরা আলোচনা করব সুন্দরবনের মধুর দাম সম্পর্কে। অনেক মানুষ মধু খেতে পছন্দ করেন। যারা মধু প্রেমী মানুষ রয়েছেন তারা অবশ্যই এই সুন্দরবনের মধুর দাম জানার অনেক আগ্রহ রয়েছে। তাই এই সম্পর্কেই আমি আজকে বলব। চলুন তাহলে জেনে নিন।
১। বাংলাদেশের সুন্দরবনের খাঁটি মধুর মূল্যঃ
- ৮০০ টাকা কেজি।
দাম কম বেশি হতে পারে। বাজারের উপর নির্ভর।
সুন্দরবনের খাঁটি মধু চেনার উপায়
সুন্দরবনের মধু দেশের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ও দামি মধু। এই মধু পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে হয়ে থাকে। সুন্দরবনের খাঁটি মধু চেনার উপায় হয়তো অনেক মানুষ জানেন না। অনেক বিক্রেতা রয়েছে যারা সুন্দরবনের খাঁটি মধু বলে ভেজাল মধু দিয়ে থাকে। তবে আপনি ভেজাল মধু কেনার আগে অবশ্যই জেনে বুঝে কিনবেন। আজকে আমি আপনার জন্য সুন্দরবনের খাঁটি মধু চেনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
যদি সঠিক ভাবে মধু চিনতে পারেন। তাহলে আপনাকে কেও ভেজাল মধু দিতে পারবে না। যদি দেয় তাহলে সাথে সাথে ধরে ফেলতে পারবেন। আপনি যদি এই আলোচনা ধৈর্য সহকারে পড়তে পারেন। তাহলে আপনি সুন্দরবনের খাঁটি মধু চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন। চলুন তাহলে আর দেরি না করে উপায়গুলো জেনে নিন।
সুন্দরবনের খাঁটি মধু রংঃ সুন্দরবনের মধুর রং হয়ে থাকবে সব সময় অ্যাম্বার। যেহেতু এখানে বিভিন্ন রকমের ফুলের মধু থেকে থাকে। সেহেতু এটি রঙের দিক দিয়ে কিছু তারতম্য দেখাবে এইটাই স্বাভাবিক। তবে এটির প্রধান রং হচ্ছে অ্যাম্বার অর্থাৎ লাইট কালার। এছাড়াও ডার্ক বা হালকা ডার্ক হতে পারে।
ঘনত্বঃ সুন্দরবনের যে খাঁটি মধু রয়েছে সেটি কখনোই ঘন হয় না। আপনি যখন এই মধু একটু হাতের আঙ্গুলে নেবেন। ঠিক তখনই পানির মত করে পিছলে পড়ে যাবে। এই সুন্দরবনের খাঁটি মধু ঘনত্ব কম হওয়ার কারণে যখন আপনি এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় নেবেন তখন এই মধু দুধের মতো সাদা ফেনা হবে।
স্বাদঃ যদি আমি সাধের দিক বলতে যায় তাহলে অন্যান্য যে মধু রয়েছে তার থেকে সুন্দরবনের খাঁটি মধুর স্বাদ সম্পন্ন আলাদা। বিশেষ করে এই মধু কেওড়া-ফুলের মিশ্রণ থাকার কারণে স্বাদ টক-টক হয়ে থাকে। কারণ এই কেওড়া-ফুলের মধু খেতে একটু টক লাগবে এইটাই স্বাভাবিক। সুন্দরবনের মধুতে এই ফুলের নেকটার একটু হলেও থাকে। সেজন্য এর স্বাদ একটু টক-টক লাগে। তবে এটি অনেক মিষ্টি। এছাড়াও এই সুন্দরবনের খাটি মধু চিনির থেকে কমপক্ষে ১ থেকে ১.৫ গুণ বেশি মিষ্টি থাকে। সেজন্য এটি খেতেও অনেক সুস্বাদু লাগে।
ঘ্রাণঃ সুন্দরবনের খাঁটি মধুর নাম ডাক আপনারা হয়তো সকলেই জানেন। সবচেয়ে ভালো মধু হচ্ছে সুন্দরবনের। তবে এটির ঘ্রাণ অনেক বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। সুন্দরবনের মধু অনেক রকমের সংমিশ্রণে তৈরি হয়ে থাকে। এই মধুতে প্রতিটি ফুলের আলাদা আলাদা ঘ্রাণ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেজন্য এই মধুর ঘ্রাণ অনেক উৎকৃষ্ট ও সুঘ্রাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও এই সুন্দরবনের খাঁটি মধুতে একটু হালকা টক-টক ঘ্রাণ রয়েছে।
আদ্রতাঃ সুন্দরবনের খাঁটি মধুতে অনেক বেশি আদ্রতা থাকে। অর্থাৎ এই মধু সমুদ্রের চারিপাশে থাকার কারণে বাতাসের জন্য জলীয় বাষ্প বেশি হয়। এর ফলে যে সকল এলাকায় মধু পাওয়া যায়। সেই এলাকায় মধু পাতলা ও হালকা রঙের। এই জন্যই সুন্দরবনের খাঁটি মধু পাতলা হয়ে থাকে।
প্রোটিন যুক্ত পোলেন মিশ্রিতঃ সুন্দরবনের খাঁটি মধু যখন চাক থেকে মধুর চেপে বের করা হয়। তারপর সেটা সুন্দর একটি পাত্রে রাখা হয়। তার ঠিক উপরের অংশে একটি আস্তরণ পরে। যেটা সাধারণত গাদ নামে পরিচিত। যদি আপনি সুন্দরবনের আশেপাশের এলাকা থেকে মধু কিনতে চান তাহলে অবশ্যই সেটা দেখে কিনবেন।
তবে অনলাইনে নিলেও সমস্যা নেই। কারণ অনলাইনে যারা মধু বিক্রয় করে তারা সেই স্তরটাকে ছেঁকে তারপরে বোতলজাত করে। সেজন্য বিভ্রান্ত হওয়ার কোন দরকার নেই। আশা করি সুন্দরবনের খাঁটি মধু চেনার উপায় সম্পর্কে আপনি একটি সঠিক ধারণা পেয়েছেন। এখন আপনি সঠিকভাবে সুন্দরবনের খাঁটি মধু কিনতে পারবেন।
সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ
সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ করে থাকে মৌয়াল নামে পরিচিত সাহসী মানুষরা। তারা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে এই মধু সংগ্রহ করে থাকেন। এই মধুর রঙ অনেকটা সোনালী রঙের হয়ে থাকে। এছাড়াও লাল বা গাঢ় বাদামী বর্ণের মধুও অনেক পাওয়া যায়। এই মধুগুলো মৌমাছির চাক থেকে সংগ্রহ করা হয়। মৌমাছিরা সুন্দরবনে বিভিন্ন রকমের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে চাকে নিয়ে আসে। আর সেই মধুর চাক মৌয়াল নামে পরিচিত সাহসী মানুষরা সংগ্রহ করে থাকে।
সুন্দরবনের যে মধু সংগ্রহকারীরা রয়েছে তারা প্রতিবছর মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে মধু সংগ্রহ করে থাকে। যখন মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে তখন তারা মধু সংগ্রহ করে। বিশেষ করে মানুষ অনেক অভিজ্ঞতা, জ্ঞান এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণার মাধ্যমে মৌচাক খুঁজে বের করে। তারপর চাকের কাছে যেয়ে ধোঁয়া ব্যবহার করে মৌমাছি তাড়ানো হয়। এরপর মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহের জন্য বিশেষ পোশাক এবং সরঞ্জাম ব্যবহার করে। মধু সংগ্রহ করা হয়ে গেলে সেই মধু পরিষ্কার করে এবং ছেঁকে বাজারজাত করা হয়। আশা করি সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ কিভাবে করে বুঝতে পেরেছেন।
সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য
সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য অনেকেই জানেন না। এই মধুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আজকে আমরা সঠিক একটি ধারণা দিবো। যদি আপনার জানার আগ্রহ থাকে তাহলে অবশ্যই আজকের এই অংশ থেকে জেনে যাবেন। সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যদি আপনি ধৈর্য সহকারে পড়তে পারেন। তাহলে সমস্ত বিষয় জানতে পারবেন। সুন্দরবনের খলিশা ফুলের চাকের মধু অনেক বেশি সুস্বাদু।
এই ফুলের মধু যারা খেয়ে থাকেন। একমাত্র তারাই জানেন যে এই মধু কেমন স্বাদ হয়ে থাকে। খলিশা ফুল একটি সুন্দর ফুল। এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে (Aegiceras corniculatum)। এই ফুলটি অনেক বেশি সুন্দরবনে হয়ে থাকে। যখন খলিশা ফুল হয় তখন মৌচাক থেকে যে মধু সংগ্রহ করা হয় সেই মধুকেই খলিশা মধু বলা হয়। এই মধু মৌয়ালরা সংগ্রহ করে থাকে মে থেকে জুলাই মাসে।
কারণ ওই সময় খলিশা ফুল ফোটে আর মৌমাছিরা ওই সময় খলিশা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। এইটা হচ্ছে একটি উপযুক্ত সময়। এই খলিশা ফুলের মধু অত্যন্ত জনপ্রিয়। এছাড়াও এই মধুর দামও অনেক বেশি। খলিশা ফুলের মধু অত্যন্ত সুস্বাদু ও মিষ্টি সুগন্ধযুক্ত। সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য চলুন এবার জেনে নিন।
বৈশিষ্ট্যঃ
- খলিশা ফুলের মধু হালকা হলুদ থেকে গাঢ় অ্যাম্বার রঙের হতে পারে।
- তুলনামূলকভাবে পাতলা এবং সহজে বয়ে যায়।
- খলিশা ফুলের মধু অনেকদিন পর্যন্ত রেখে দিলে সেই মধু লাল বর্ণের হয়ে যায়।
- এই মধু কিছুটা হালকা হয়ে থাকে তবে এই মধু খেতে খুবই সুস্বাদু তবে একটু টক টক মিষ্টি।
- সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে একটু ঝাঁকুনি দিলে মধু ফেনা হয় যায়।
- এই মধু ফ্রিজে রাখলেও জমাট বাঁধে না।
যারা মধু সংগ্রহ করে তাদের কি বলে
উপরে আমরা আলোচনা করেছি যে সুন্দরবনের খাঁটি মধু চেনার উপায় সম্পর্কে। এছাড়াও আরো আলোচনা করেছি যে সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ করে কি করে এই সম্পর্কে। এখন আমরা আলোচনা করব যারা মধু সংগ্রহ করে তাদেরকে কি বলে। এই বিষয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে আপনার প্রশ্নের উত্তর জেনে নিন।
মৌয়াল হলো এক ধরনের পেশাভিত্তিক গোষ্ঠী যারা বিভিন্ন জায়গায় যে মধু ও মৌচাক সংগ্রহ করে থাকে। পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় এদেরকে দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে সুন্দরবনসহ আরো বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। তবে এখন বর্তমান সময়ে মৌয়ালেরা মৌমাছি পালন করে। তারা মৌচাষের মাধ্যমে মধু, মোম, ও রয়েল জেলী সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়াও মৌয়ালেরা কখনো কখনো রানী মৌমাছি সংগ্রহ করে বিভিন্ন বাজারে বিক্রয় করে।
তারা কৃষকদের শস্যের পরাগায়নের জন্য মৌচাষ করে থাকে। অনেকে রয়েছে শখের বসে মৌচাষ করে থাকে। আবার অনেকেরই এইটা মূল পেশা। যাদের মূল পেশা তারা সবসময় মৌচাষ করে মধু সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রয় করে। মৌয়াল নামটি এসেছে মৌ বা মধু শব্দ থেকে। মৌয়ালদের জীবন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, মৌমাছির কামড় থেকে তাদের অ্যালার্জি হতে পারে। এছাড়াও, সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণেও তাদের মৃত্যু ঘটতে পারে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ে আশা করি সুন্দরবনের খাঁটি মধু চেনার উপায় এবং সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এই আর্টিকেলটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে। তাই দেরি না করে আপনার বন্ধুদের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন