অনেকেই রয়েছেন যারা তেতুল খাওয়া ভালো মনে করেন আবার অনেকেই মনে করেন তেতুল
খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই আমি আপনাদের সামনে আজকে তেতুলের উপকারিতা
ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। আমি আমার আর্টিকেল তেতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা
এর ভেতর তেতুল খেলে কি ক্ষতি হয় তা আলোচনা করেছি।
তেতুল নিয়ে আপনাদের মনে যদি
কিছু জানার থাকে তাহলে তেতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলটি পড়ুন। আমি আশা করছি যে আমার লেখা তেতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের
মনে তেতুল সম্পর্কে যত রকমের কনফিউশন আছে দূর হয়ে যাবে।
তেতুল কখন খেতে হয়
অনেক সমস্যা রয়েছে যেই সমস্যা সমাধানের জন্য তেতুল জাদুর মতন কাজ করে। তেতুল
খাওয়ার ফলে সেই সকল রোগ খুব সহজেই আমাদের শরীর থেকে বিতাড়িত হয়। আবার আমাদের
বাঙ্গালীদের মধ্যে একটি কথা অনেক বেশি প্রচলিত আছে তেতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে
যায়।
আসলে এই কথার সত্যতা ঠিক কতটুকু তা অনেকেই জানেনা। অনেকেই মনে করে তেতুল আমাদের
শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু আমি বলব এটি একদম ভুল কথা। তেতুল আমাদের শরীরের জন্য
অনেক বেশি উপকারী।
বিভিন্ন রকম রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে আপনি যদি নিয়মিত কিছু নিয়ম মেনে তেতুল
খাওয়া শুরু করেন তাহলে সেই সকল রোগ থেকে মুক্তি পেতে ঔষধ খেতে হবে না। এখন আপনার
মনে প্রশ্ন জাগতে পারে তেতুল কখন খেতে হয়। তাহলে আমি কিছু রোগের নাম বলব যে সকল
রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে আপনি তেতুল খেতে পারেন।
- ওজন কমাতে
- হজমের সমস্যা দূর করতে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে
- লিভারের সমস্যা দূর করতে
- রক্তে শর্করা বৃদ্ধি করতে
- স্কার্ভি রোগের প্রতিরোধ করতে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে
- হার্টের স্বাস্থ্য ভালো করতে
- ম্যালেরিয়া দূর করতে
- চোখের সমস্যা দূর করতে
- কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে
- বুকের ধরফর দূর করতে
- অ্যালকোহলের বিষাক্ততা দূর করতে
তেতুল খেলে কি ক্ষতি হয়
তেতুল খেতে পছন্দ করে না কিংবা তেতুল এর নাম শুনলে জিভে জল আসে না এমন মানুষ
খুঁজে পাওয়া দায়। কারণ তেতুল এমন একটি উপাদান যার নাম শুনলেই সকলের মুখে জল চলে
আসে। বিশেষ করে রাস্তার পাশের ফুচকা আর চটপটি এই দুটোতে তেতুল যেন এক অসাধারণ
স্বাদ নিয়ে আসে। তেতুল ছাড়া এই দুটোর কথা ভাবাই যায় না।
যারা টক খেতে পছন্দ করে তাদের পছন্দের তালিকায় সব সময় তেতুল থাকে। তেতুল কাঁচা
হোক কিংবা পাকা অনেক তৃপ্তি নিয়েই খেয়ে থাকেন। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ
বয়সের সকলের কাছেই তেতুল একটি পছন্দের খাবার। অনেকেই আছেন যারা মনে করেন তেতুল
খাওয়ার ফলে রক্ত পানি হয়ে যায়। এটি একদম ভুল ধারণা। তেতুলের মাঝে এমন কোন
উপাদান নেই যা আমাদের রক্তকে পানি করে দেয়।
তেতুলের মাঝে এমন উপাদান রয়েছে যা আমাদের বিভিন্ন রোগের সমাধান হিসেবে কাজ করে।
তেতুল আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাই বলে যে তেতুলের কোন ক্ষতিকর দিক
নেই তা কিন্তু নয়। প্রতিটি জিনিসের যেমন ভালো দিক রয়েছে ঠিক তেমন ক্ষতিকর দিক ও
রয়েছে। তাই আমি এখন আপনাদের সামনে তেতুল খেলে কি ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে আলোচনা
করব।
তেতুল খেলে কি ক্ষতি হয়ঃ তেতুলে রয়েছে এক ধরনের এসিড যা আমাদের দাঁতের
ক্ষতি করে থাকে। আমাদের সকলের দাঁতের বাইরে একটি শক্ত স্তর থাকে। যা আমাদের
দাঁতকে সকল ধরনের জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে। যাকে বলা হয়ে থাকে এনামেল। আর
তেতুল এই এনামেল আঘাত করে এবং আস্তে আস্তে হয় করতে থাকে।
যা আমাদের দাঁতের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই অবশ্যই তেতুল খাওয়ার পর
কুলকুচি করতে হবে। এতে করে দাঁতের আশেপাশে লেগে থাকা তেতুল দাঁতের ক্ষতি করতে
পারবে না। এছাড়াও তেতুলে অম্লের উপস্থিত অনেক বেশি। তাই যদি আমরা অনেক বেশি
পরিমাণে তেতুল খাই তাহলে উপস্থিত অম্ল যা এক ধরনের এসিড তা আমাদের পাচনতন্ত্রের
অনেক ক্ষতি করে থাকে।
তাছাড়াও তেতুলকে এলার্জির দুশমন বলা যেতে পারে। কারণ কেউ যদি
এলার্জি হওয়ার পর তেতুল খায় তাহলে সেটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই আপনার যদি
এলার্জি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তেতুল খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।
পাকা তেতুলের উপকারিতা
পাকা তেতুল নামটি শুনেই কি আপনার মুখে জল আসলো। এটা আশ্চর্য কোন বিষয় নয় পাকা
তেতুল দেখলে অথবা নাম শুনলে মুখে জল আসবে এটাই তো স্বাভাবিক। বিশেষ করে মেয়েদের
ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি দেখা যায়। অনেক মুরুব্বি রয়েছে যারা ছোটদের তেতুল খেতে
মানা করে থাকে।
কিন্তু আপনি যদি পাকা তেতুলের উপকারিতা সম্পর্কে জানেন তাহলে আজকের পর থেকে
আপনারা আর কাউকে পাকা তেতুল খেতে নিষেধ করবেন না। তাই আমি এখন আপনাদের সামনে পাকা
তেতুলের উপকারিতা গুলো তুলে ধরব।
পাকা তেতুলের উপকারিতাঃ
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ কোন মানুষ যদি নিজের
ওজন কমাতে চাই তাহলে তিনি নিঃসন্দেহে পাকা তেতুল বেছে নিতে পারেন। পাকা তেতুল আমাদের
শরীরের চর্বি গলাতে অনেক বেশি সাহায্য করে। যার ফলে একজন ব্যক্তির খুব দ্রুত ওজন
কমে যায়। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে কিছু পরিমাণ পাকা তেতুল খাওয়া শুরু করুন। এতে
করে খুব দ্রুত আপনার ওজন কমে যাবে।
চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করেঃ আপনি জানলে অবাক হবেন আমাদের চোখের জন্যও
তেতুল অনেক বেশি উপকারী। যেমন অনেকের দেখা যায় চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। এই
সমস্যা দূর করতে তেতুল অনেক বেশি সাহায্য করে। তেতুলে এমন ধরনের যৌগিক উপাদান
রয়েছে যা আমাদের চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া রোধ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের শরীরে সকল
ধরনের রোগের সাথে যুদ্ধ করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আর যদি সেই
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তাহলে আমাদের শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর তেতুল
আমাদের সেই
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অনেক বেশি সাহায্য করে। তাই আপনিও যদি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চান তাহলে নিয়মিত পাকা তেতুল খান।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ প্রায় প্রতিটি মানুষ মাঝে মাঝেই হজমের সমস্যায়
ভুগে থাকেন। অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা হয়ে থাকে। আর এই ধরনের সমস্যা
সমাধানের জন্য আপনি তেতুল ঔষধ হিসেবে বেছে নিতে পারেন। তেতুলে উপস্থিত থাকা
ম্যালিক এসি ড ও পটাশিয়াম আমাদের এ ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ আপনি কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অনেক
বেশি চিন্তা করছেন। হঠাৎ করে ডায়াবেটিস বেড়ে যাচ্ছে আবার হঠাৎ করে
ডায়াবেটিস
কমে যাচ্ছে। কিছুতেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। যদি এমনটা হয় তাহলে
আপনি তেতুলের বীজ খেতে পারেন। তেতুলের বীজে পাওয়া যায় এনজাইম যা আমাদের রক্তে
সুগারের মাত্রা কমিয়ে আনে। যার ফলে খুব সহজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করেঃ অনেকেই বিভিন্ন রকম হার্টের
সমস্যায় ভুগে থাকেন। আপনি যদি আপনার হার্ট কে ভালো রাখতে চান এবং সকল ধরনের রোগ
হার্ট থেকে দূরে রাখতে চান তাহলে নিয়মিত তেতুল খান। তেতুলে থাকা পটাশিয়াম
আমাদের রক্তের চাপ কমিয়ে থাকে। যার ফলে আমাদের হার্ট অনেক বেশি সুস্থ থাকে।
কোলেস্ট্রল কমাতে সাহায্য করেঃ অনেক ব্যক্তি তার শরীরের কোলেস্ট্রল নিয়ে
অনেক বেশি চিন্তিত থাকেন। মনে মনে ভাবেন কিভাবে কোলেস্ট্রল কমাবেন। শরীরের
কোলেস্ট্রল কমাতে অনেক বেশি সাহায্য করে তেতুল। তাই আপনি আপনার শরীরের কোলেস্ট্রল
কমানোর জন্য তেতুল খেতে পারেন।
সর্দি কাশি কমাতে সাহায্য করেঃ একজন ব্যক্তির সর্দি কাশি বেশি হয় কারণ
তার শরীরে ইমিউনিটির অভাব থাকে। সর্দি কাশি কমাতে চাইলে শরীরের ইমিউনিটি শক্তি
বাড়াতে হবে। আর তেতুল আমাদের শরীরের ইমিউনিটি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই
সর্দি কাশি কমাতে আপনি তেতুল খেতে পারেন।
চুলের যত্নে সাহায্য করেঃ আপনি জানলে অবাক হবেন যে পাকা তেতুল আমাদের
চুলের জন্যও অনেক বেশি উপকারী। পাকা তেতুলের রস যদি নিয়মিত চুলের গোড়ায় লাগানো
যায় তাহলে এর ফলে চুলের গোড়ায় ফলিকের বৃদ্ধি ঘটবে। এতে করে চুল অনেক শক্তিশালী
হবে এবং চুল পড়া কমে যাবে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করেঃ তেতুলে রয়েছে সক্সলেট মিথেনলিক
এক্সট্রাক্ট যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তেতুলে উপস্থিত
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের কোষ গুলোকে নির্মূল করতে সাহায্য করে। এর ফলে
ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমে যায়। তাই আপনি আপনার শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পাকা
তেতুল খেতে পারেন।
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করেঃ প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন
উপজাতিরা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করতে তেতুলের ব্যবহার করে আসছে। বিশেষ করে
আফ্রিকান উপজাতিরা ম্যালেরিয়া দূর করার জন্য তেতুল খেয়ে থাকেন। তাই বলা যায় যে
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করতে তেতুলের ভূমিকা অনেক বেশি।
ভেষজ গুণঃ প্রাচীনকাল থেকে তেতুল বিভিন্ন রকম ভেষজ ঔষধ হিসেবেও কাজ করে
আসছে। বুকের ধড়ফড়, হাত-পা জ্বালাপোড়া করা অথবা মাথা ঘুরানো এ সকল সমস্যার
সমাধানের ক্ষেত্রেও তেতুলের ভূমিকা অনেক বেশি।
এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ততা কাটানোর জন্য পাকা তেতুল অনেক বেশি উপকারী।
নিয়মিত তেতুল খেলে হার্ট ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। শরীরের বিভিন্ন অংশে
ব্যথা কমানোর জন্য তেতুল গরম করে তার প্রলেপ ব্যথাকৃত স্থানে লাগালে ব্যথা খুব
দ্রুত সেরে যায়।
ছেলেরা তেতুল খেলে কি হয়
ছেলেদের মাঝে মেয়েদের তুলনায় তেতুল খাওয়ার প্রবণতা কম লক্ষ্য করা যায়। ছেলেরা
সাধারণত তেতুল খেতে খুব একটা পছন্দ করে না। মেয়েদের পছন্দের তালিকায় তেতুল সব
প্রথম লিস্টে থাকলেও ছেলেদের ক্ষেত্রে কিন্তু এটা হয় না।
ছেলেরা টক জাতীয় খাবার খেতে একটু কম পছন্দ করে। কিন্তু সকলেই যে একই রকম তা
কিন্তু নয়। কিছু কিছু ছেলে রয়েছে যারা টক জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করে। তারা
তেতুল ও খেয়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে। আপনি যদি এমনটা হন তেতুল যদি আপনার ও পছন্দ
হয়ে থাকে তাহলে আমি বলব আজকে থেকেই সাবধান হয়ে যান।
কারণ মেয়েদের ক্ষেত্রে তেতুল খাওয়া সমস্যা সৃষ্টি না করলেও ছেলেদের ক্ষেত্রে
বেশি তেতুল খাওয়া সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। বিভিন্ন চিকিৎসায় দেখা গেছে যে
ছেলেরা যদি বেশি পরিমাণে তেতুল খায় হলে তাদের স্প্যাম কমে যেতে পারে। তাই অবশ্যই
ছেলেরা তেতুল খাওয়ার পূর্বে একটু বুঝেশুনে তেতুল খাবেন।
তেতুল খেলে কি প্রেসার কমে
যে সকল বাড়িতে প্রেসারের রোগী রয়েছে প্রতিটি বাড়ির কোনাই কিছু পরিমাণ পাকা
তেতুল পাওয়া যাবে। যখনই সেই প্রেসারের রোগীর প্রেসার বেড়ে যাবে ঠিক তখনই সেই
পাকা তেতুল রস করে রোগীকে খাওয়ানো হয়।
কারণ আমরা সকলেই মনে করি প্রেসার কমাতে তেতুলের রস অনেক বেশি সাহায্য করে। কিন্তু
আসলেই প্রেসার কমাতে তেতুলের রস কতটুকু সাহায্য করে কারো কাছে কি এটির প্রমাণ
আছে। না এর কোন প্রমাণ নেই। কারণ এটি একটি ভিত্তিহীন কথা। প্রেসার কমানোর জন্য
তেতুলের রস কোন উপকারেই আসে না।
তেতুল আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম সমস্যা সমাধান করে ঠিক কিন্তু প্রেসার ওঠার সাথে
সাথেই আপনি তেতুলের রস খাওয়ালে প্রেসার কমে যাবে এটি একদম ভুল ধারণা। তাই যদি
আপনার ধারণা ও এরকম হয় তাহলে আজকে থেকেই এই ধারণা পাল্টে ফেলুন। আর রোগীর
প্রেসার বাড়ার সাথে সাথেই তেতুলের রস খাওয়ানোর অভ্যাস বদলান।
ওজন কমাতে তেতুল খাওয়ার নিয়ম
আমরা অনেকেই জানি তেতুল ওজন কমাতে অনেক বেশি সাহায্য করে। কিন্তু কিভাবে করে তা
কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা। আমরা চাই তেতুল খেয়ে ওজন কমাতে কিন্তু চিন্তাই পরি
তখন যখন ভাবি কিভাবে তেতুল খাবো। তখন মাথায় আসে অনেক ধরনের প্রশ্ন।
যেমন ওজন কমানোর জন্য কাঁচা তেতুল খাবো নাকি পাকা তেতুল। সকালে তেতুল খাবো নাকি
রাতের বেলায়। সরাসরি তেতুল খাবো নাকি শরবত করে খাবো। আপনার মনেও যদি এই ধরনের
প্রশ্ন আসে তাহলে আমি বলব আপনি আপনার অতিরিক্ত চর্বি কমানোর জন্য তেতুল দিয়ে
তৈরি কিছু পানীয় খেতে পারেন।
যে সকল পানীয় পান করার ফলে খুব দ্রুত আপনার শরীরের ওজন কমে যাবে। এখন আপনাদের
সামনে তেতুল দিয়ে পানীয় কিভাবে তৈরি করবেন তা আলোচনা করব।
তেতুল ও পুদিনা পাতাঃ তেতুল দিয়ে তৈরি একটি কার্যকরী পানীয় হচ্ছে তেতুল
ও পুদিনা পাতার পানীয়। এই পানীয় তৈরি করতে আপনি আধা কাপ তেতুল চটকিয়ে রস বের
করে নেবেন। তার সাথে এক চিমটি বিট লবণ মেশান। তার ভেতর ১০ থেকে ১২ টি পুদিনা পাতা
দিন।
এবার আধা চা চামচ গুড় মেশান। এবার সব কয়টি উপাদান দুই গ্লাস পানি দিয়ে একসাথে
ব্লেন্ড করে নিন। তৈরি হয়ে গেল তেতুল দিয়ে তৈরি ওজন কমানোর একটি পানীয়। এই
পানীয় দিনের যেকোনো সময় পান করতে পারেন।
তেতুল, জিরা ও তুলসী পাতার পানীয়ঃ আধা কাপ তেতুল ভালোভাবে চটকে নিন।
এবারের সাথে ১০ থেকে ১২ টি তুলসী পাতা দিন। এর ভেতর আধা চা চামচ জিরার গুড়া দিন
ও এক চিমটি লবণ এবং এক চা চামচ গুড় দিতে হবে। সবগুলো উপকরণ একসাথে ব্লেন্ড করে
নিন। তৈরি হয়ে গেল ওজন কমানোর পানীয়। এই পানীয় আপনি দিনের যেকোনো সময় খেতে
পারেন।
আপনি আপনার ওজন কমানোর জন্য তেতুল দিয়ে তৈরি এই দুটি পানীয়র মধ্যে যেকোনো একটি
পানীয় প্রতিদিন খেতে পারেন। এতে করে আপনার খুব দ্রুত ওজন কমে যাবে। ওজন কমানোর
জন্য আপনাকে খুব বেশি ব্যায়াম কিংবা ডায়েট চার্ট ফলো করতে হবে না।
দ্রষ্টব্যঃ আপনার যদি গ্যাসের সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই এই পানীয়
অতিরিক্ত পান করা যাবে না। তাই এই পানীয় প্রথমদিকে অল্প পরিমাণ পান করে দেখবেন
আপনার কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা। যদি সমস্যা হয় তাহলে এই পানীয় পান করা হতে বিরত
থাকুন।
তেতুলের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা
আমরা কমবেশি সকলেই তেতুলের উপকারিতা সম্পর্কে জানি। আমরা সকলেই তেতুল খাই এবং
তেতুলের বিচি ফেলে দেই। কিন্তু আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি আজকের পর থেকে আর তেতুলের
বিচি ফেলবেন না।
তেতুলের বিচি আমাদের শরীরের অনেক বেশি উপকার করে। উপরের আলোচনা থেকে আপনারা সকলেই
তেতুল আমাদের শরীরের জন্য কতটুকু উপকারী তা জেনেছেন এখন জানবেন তেতুলের বিচি
আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী।
উপকারিতাঃ আমি এখন আপনাদের সামনে তেতুলের বিচির উপকারিতা গুলো কি কি তা
তুলে ধরবো। আশা করছি আপনারা পড়ে বুঝতে পারবেন তেতুলের বিচি আমাদের শরীরের জন্য
কতটা উপকারী।
- যে সকল ব্যক্তির রক্ত স্বপ্নদোষ রয়েছে তাদের জন্য তেতুলের বিচি যাদুকরি প্রভাব ফেলে। আপনি যদি তেতুলের বিচি খান তাহলে স্বপ্নদোষের সমস্যা অনেকটাই কেটে যায়।
- তেতুলের বিচি যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে অনেক বেশি সাহায্য করে। তেতুলের বিচি খাওয়ার ফলে বীর্য ঘন হয় এবং শুক্রাণুর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- তেতুলের বিচি শারীরিক দুর্বলতা কাটাতেও অনেক বেশি সাহায্য করে।
- মহিলাদের জরায়ুর শক্তিবর্ধনে তেতুলের বিচির ভূমিকা অনেক বেশি।
- তেতুলের বিচি খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়।
- তেতুলের বিচি বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ হিসাবেও কাজ করে থাকে।
- আমাদের শুষ্ক চোখের জন্য যে ড্রপ তৈরি করা হয় তা সাধারণত তেতুলের বিচি দিয়ে তৈরি করা হয়।
- গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব কাটানোর জন্য তেতুলের বিচির শরবত অনেক বেশি উপকারী।
অপকারিতাঃ তেতুলের বিচির অপকারিতা সম্পর্কে কোন তথ্য এখন পর্যন্ত আমি
খুঁজে পাইনি। সেই কারণে তেতুলের বিচির অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সামনে কোন তথ্য
তুলে ধরতে পারলাম না। তেতুলের বিচি খাওয়ার পর যদি কোনরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
দেখা দেয় তাহলে আপনি আমাদের জানাতে পারেন। সে বিষয়ে মতামত প্রদান করার চেষ্টা
করব।
লেখকের মন্তব্য
আশা করছি আপনারা আমার লেখা আর্টিকেলটি পড়ে তেতুল সম্পর্কে সকল কিছু সঠিক জানতে
পেরেছেন। তেতুল আমাদের জন্য কতটা উপকারী আর কতটা উপকারী সে সম্পর্কে আপনাদের
পুরোপুরি ধারণা এসেছে। আশা করছি আমার আর্টিকেলটি পড়ে আপনি আপনার প্রয়োজনীয়
তথ্যগুলো খুঁজে পেয়েছেন। আমি আমার আর্টিকেল দ্বারা তেতুল সম্পর্কে মানুষের যে
ভুল ধারণা তা দূর করার চেষ্টা করেছি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন