সুপ্রিয় দর্শকবৃন্দ আজকে আমি আপনাদের জানাব নিম পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত।
প্রায় চার হাজার বছর থেকে বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহার হচ্ছে নিম। নিম গাছের পাতা থেকে শুরু করে নিম গাছের ছাল, নিম গাছের শিকড়, নিম গাছের ডাল, নিম গাছের পাতা ফুল ও ফল সবকিছুই পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। আপনি যদি সঠিক নিয়মে মিমের ব্যবহার জানেন তাহলে আপনি অনেক রোগ ও শারীরিক সমস্যা থেকে বাঁচতে পারবেন।
খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়
খালি পেটে নিম পাতার রস খুবই উপকারী। নিম পাতায় আছে এন্টিমাইক্রোবিয়াল অ্যান্টিভাইরাল ও অক্সইডএন প্রওভআইডইস যা শরীরে প্রবেশ করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে ছোটখাটো রোগ শরীরে আক্রমণ করতে পারে না।
প্রতিদিনের খাবার থেকেও বিভিন্ন উপায়ে আমাদের শরীরে টক্সিম প্রবেশ করে। তাই নিয়মিত শরীর থেকে এই টক্সিম বের করার প্রয়োজন আছে। আমাদের শরীর থেকে এই টক্সিম বের করতে নিম পাতার রস খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। পেটে গ্যাস্টিকের সমস্যা নির্মূল করতে সাহায্য করে নিম পাতার রস। নিম পাতার রস রক্ত পরিষ্কার রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ওজন কমাতে,ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে খালি পেটে নিম পাতার রস। পেটে ব্যথা, আলসার, ও কিরমিনাশক হিসেবে কাজ করে খালি পেটে নিমপাতা খাওয়ার অভ্যাস।
নিম পাতার রস সেবনে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাবে অনেকাংশে। নিম পাতার রসের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। খালি পেটে নিম পাতার রস একটি মহা ঔষধ নামে পরিচিত।
তবে নিম পাতা খাওয়ার একটি সঠিক নিয়ম আছে। নিম পাতা খালি পেটে খেতে গেলে সঠিক নিয়মটা তাহলে জেনে নেই। আয়ুর্বেদিক বইয়ে উল্লেখ আছে যে খালি পেটে দুই থেকে তিনটি পাতা বেটে রস খেতে হবে। আবার আপনি তা মুখে চিবিয়েও খেতে পারেন।
এটি আবার প্রতিদিন খাওয়া যাবেনা। একদিন পরপর টানা সাত দিন খেতে হবে। এভাবে নিম পাতার রস সেবনে আপনার শারীরিক সমস্যার সমাধানে সহায়তা করবে। এর ফলে যদি আপনার কোন শারীরিক সমস্যা বৃদ্ধি পায় তাহলে অবশ্যই একজন আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞের কাছে পরামর্শ নিতে পারেন।
নিম পাতার উপকারিতা এলার্জি
আপনার যদি এলার্জি থাকে তাহলে অবশ্যই নিমপাতা একটি মহা ঔষধ বলে আপনার জন্য প্রমাণিত হবে। এলার্জি দূর করতে হলে আপনি একদিন পরপর টানা সাত দিন দুই হতে তিনটি সদ্য গজানো নিমপাতা মুখে চিবিয়ে খাবেন। এলার্জি সাধারণত রক্তের ইনফেকশনের কারণে হয়ে থাকে। তাই আপনি যদি এলার্জি দূর করতে চান তাহলে অবশ্যই নিমপাতা সেবন করুন।
নিম পাতা পেস্ট তৈরি করে এলার্জির উপরে লাগাতে পারেন। এটি খুব কার্যকরী এলার্জি কমাতে। আবার এলার্জি কমাতে আপনি নিমপাতার সিদ্ধ করে সেটা গোসলের পানিতে দিয়ে শরীরে ঢালতে পারেন। এটি আপনার পুরো শরীরের এলার্জি কমাতে সাহায্য করবে।
এলার্জি কমাতে নিম পাতার আরেকটি ব্যবহার শুনে নিন। সেটাও খুব উপকারী প্রতিটি মানুষের জন্য। এই প্রক্রিয়ায় নিমপাতা আবার দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। নিমপাতা শুকিয়ে সেটা বেটে আপনি শরীরে বা আপনার বাচ্চার শরীরে যে তেল ব্যবহার করেন সেটাতে ডুবিয়ে রেখে দিলে আপনি এটা ৬ মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। নিম পাতা আবার ফাঙ্গাস ও দাউদ থেকে রক্ষা পেতে খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
নিম পাতা মুখে দিলে কি হয়
নিমপাতা মুখে দিলে মুখের ব্রণ, ও ব্রনের দাগ নিমেষেই দূর করবে। নিমপাতা মুখে দিলে মুখের বিভিন্ন র্যাশ কমাতে সাহায্য করবে নিম পাতার পেস্ট। নিমপাতা আবার মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে অনেকাংশে।
নিমপাতা মুখে দিলে মুখের ব্রণ
নিমপাতা মুখে দিলে মুখের ব্রণ কমে যায়। ব্রণ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে হলে আমাদের নিম পাতার ব্যবহার করতেই হবে। এটির কোন ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই ত্বকের জন্য।
নিমপাতা আমাদের দেশে সবখানেই পাওয়া যায়। যদি আপনি না পান তাহলে বাজার থেকে নিম পাউডার ও নিতে পারেন। আপনি এটি একটি পেস্ট হিসেবে তৈরি করে ব্রণের জায়গায় লাগাতে পারেন। যার ফলে আপনার ব্রণ খুব সহজেই সেরে যাবে।
নিম পাতার ব্যবহার
নিম পাতার ব্যবহার প্রায় কমবেশি সবাই করে থাকে । নিম পাতা মানব শরীরের জন্য খুব কার্যকরী একটি উপাদান। যা আমাদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে।
নিম পাতা কেউ ব্যবহার করে ক্রিমিনাশক হিসেবে, কেউ ব্যবহার করে ত্বকের সমস্যার সমাধানে। নিম পাতার ব্যবহার বিভিন্ন উপায়ে হয়ে থাকে। কেউ নিম পাতার ক্রিম তৈরি করে, কেউ সাবান তৈরি, করে কেউ পেস্ট তৈরি করে, কেউ নিম পাতার রসও খেয়ে থাকে আবার সিদ্ধ করো সেটিকেও ব্যবহার করে থাকে নিজ নিজ সমস্যা অনুযায়ী।
কাঁচা হলুদ ও নিম পাতার গুণাগুণ
কাঁচা হলুদেও জীবাণু নাশক এন্টিবায়োটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয় সারা দেশে। যদি কোথাও কেটে যায় তাহলে জীবাণু নাশক হিসেবে কাঁচা হলুদ নিম পাতা ব্যবহার করা হয় কাটা স্থানে। এর ফলে কাঁটা স্থানে কোন ইনফেকশন হয় না এবং খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। হলুদ ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
জ্বর ও সর্দি কাশি কমাতে নিম পাতাও হলুদের জুড়ি মেলা ভার। হলুদ ও নিমপাতা মুখে নিয়মিত ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ দাগ কমে গিয়ে মুখে এনে দেয় উজ্জ্বলতা । এছাড়াও আরো অনেক গুণাগুণ রয়েছে কাঁচা হলুদ ও নিমপাতার।
নিম পাতার বড়ি খাওয়ার উপকারিতা
নিম গাছের পাতায় আছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। নিম পাতায় আছে কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস,ভিটামিন সি ও বিভিন্ন ধরনের অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায়। তাই অনেকেই বিশ্বাস করেন যে নিম পাতায় বড়ি খাওয়ায় ৪০ টি সাধারণ রোগ নিরাময় করা যায়।
চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা
চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা অনেক। যদি কারো চুল পড়ার সমস্যা থেকে থাকে তাহলে সে নিমপাতা কোন ব্যালেন্ডারে অথবা পাটায় বেটে ব্যবহার করতে পারে। তবে আধাঘন্টা রাখতে হবে। নিম পাতার ব্যবহার খুশকি দূর করে পুরোপুরি ভাবে। নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে নিমপাতা।
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার
যেকোনো ধরনের চুলকানিতে নিমপাতা একটি এন্টিবায়োটিক ঔষধ হিসেবে কাজ করে। নিম পাতা বেটে পেস্ট করে আমরা চুলকানিতে লাগাতে পারি এর ফলে চুলকানি খুব সহজেই নির্মূল হবে।
চুলকানি দূর করতে আমরা নিম পাতা সিদ্ধ করে তার পানি দিয়ে গোসল করতে পারি এর মাধ্যমে চুলকানি কমে যাবে।
আবার নিম পাতার শুকিয়ে বেটে শরীরে ব্যবহৃত তেলের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে পারি। এভাবে নিম পাতা চুলকানিতে ব্যবহার করতে পারি। আরো বিভিন্ন উপায়ে রয়েছে নিম পাতা ব্যবহারের।
পরিশেষে বলা যায় যে, নিম গাছের ফুল আমাদের লিভার কে ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিম গাছের ডাল আমাদের দাঁতের ও মাড়ির সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিমপাতা চোখের জন্য বেশ উপকারী একটি উপাদান।
নিম পাতার উপকারিতা তো রয়েছেই তবে এতে ব্যবহারের ফলে কারো যদি শারীরিক কোন সমস্যা যেমন নিম পাতার রস খাওয়ার ফলে এলার্জির সমস্যা শুরু হয় তাহলে অবশ্যই একজন আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করবেন।
কারণ আমরা সবাই জানি আমাদের সবার শরীর সমান নয়। দেখবেন নিম পাতা দিয়ে অনেক উপকৃত হয় আবার অনেকে সমস্যায়ও পড়তে পারে। তবে আমরা সবাই জানি যে মিমের অপকারিতা থেকে উপকারিতাই বেশি যদি আমরা এটা সঠিকভাবে ব্যবহার করি।
إرسال تعليق