সুপ্রিয় দর্শকবৃন্দ আজকে আমরা জানবো ডায়রিয়ার বা পাতলা পায়খানা সম্পর্কে। পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে কি খাওয়া যাবে কি যাবে না সে সম্পর্কেও বিস্তারিত জানব।
ডায়রিয়া বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ছোট কিংবা বড় প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ায়। আমাদের দেশে শীতকালে তুলনায় গ্রীষ্মকালের ডায়রিয়ার প্রকোপ টা বেশি দেখা যায়।
তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া থেকে খুব সহজেই আরোগ্য করা যায়। ঠিক তেমনি সচেতনতার অভাবে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া ও কিন্তু হতে পারে প্রাণঘাতী।
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া কি?
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া একটি পানিবাহিত রোগ। হজমের সমস্যা হতে পারে এবং দিনে তিনবারের অধিক দুর্গন্ধযুক্ত অনেক বেশি পরিমাণে পানির মতো মল ত্যাগ করাকে ই ডায়রিয়া বলে। এটি তিন হতে চার দিন স্থায়ী হয়ে থাকে।
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার কারণ
আমরা সবাই জানি ডায়রিয়া একটি পানিবাহিত রোগ তবে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে ডায়রিয়া হওয়ার। এই রোগটি শরীরে লবণ ও পানির বেশি ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে। তবে রোটা ভাইরাসের কারণে শতকরা ৬০ থেকে ৭০ জন শিশুর ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে।
তবে আরও অন্যান্য রোগ জীবাণু দিয়েও পাতলা পায়খানা হয়। যেমন শিগ্যলা, ক্যাম্পোলোব্যক্টার, যেজুণী প্রভৃতি জীবণুর কারণে পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। তবে ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী পাকস্থলীতে সংক্রমণের ফলেও পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হতে পারে।
পাতলা পায়খানা হলে মাছ খাওয়া যাবে কি
অনেকেরই প্রশ্ন থাকে পাতলা পায়খানা হলে মাছ খাওয়া যাবে কি না। বিশেষজ্ঞেরা বলেছেন মাছ খাওয়া যাবে কিন্তু মাছটা অতিরিক্ত তেলে ভাজা যাবে না মাছটা হালকা তেলে ভালো করে সিদ্ধ করে রান্না করতে হবে সঙ্গে একটু কাঁচা কলা দিলে আরো বেশি ভালো হয়। কারণ ডায়রিয়া হলে বাচ্চার প্রোটিন যেন ঠিক থাকে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
পাতলা পায়খানা হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে
পাতলা পায়খানা হলে যেসব ফল বিশেষজ্ঞগণ খেতে বলেন তা হল: তরমুজ সহজেই হজম হয় তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। যা পাতলা পায়খানা আরোগ্য লাভ করতে আমাদের সাহায্য করে।
এরপর আপনি যে ফলটি খেতে পারেন তা হল কলা। যা শরীরে শক্তি যোগায়। কলা সহজে হজম হয় এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে তা পানি ও ইলিক্টরেলাইসের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। পাতলা পায়খানার ফলে আপনার শরীরের যে দুর্বল হয়ে পড়ে সেটা থেকে মুক্তি দেয় সেটা থেকে কলা।
এর পরের ফলটি হল পেঁপে।এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম থাকে। পেঁপে হজম করতে সহজ।পেঁপে একটি কার্যকরী ফল পাতলা পায়খানা থেকে তারাতাড়ি সেরে উঠতে সাহায্য করে।
এর পরের কার্যকারী ফলটি হলো আপেল। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে। তবে আপেল এমনি ভাবে খাওয়া যাবে না। এটা সিদ্ধ করে জুস বানিয়ে খেলে তাড়াতাড়ি পাতলা পায়খানা সেরে যায়। আঙ্গুরে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। পাতলা পায়খানার এর ফলে শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি হয়। তা অভাব দূর করতে সাহায্য করে আঙুর। আঙ্গুর একটি কার্যকরী ফল পাতলা পায়খানা থেকে মুক্ত হওয়ার।
পাতলা পায়খানা হলে ডিম খাওয়া যাবে
পাতলা পায়খানা হলে ডিম খাওয়া যাবে কিনা এটা নিয়ে সবাই একটা সংশয় ভোগে। কেউ কেউ ধারণা করে পাতলা পায়খানা হলে ডিম খাওয়া যাবে, আবার কেউ কেউ ধারণা করে যে পাতলা পায়খানা হলে ডিম খাওয়া যাবে না। পুষ্টিবিদদের মতে ডিম একটি আদর্শ প্রোটিন খাদ্য সকল বয়সী মানুষের জন্য।
তাই পাতলা পায়খানা হলে ডিম খাওয়া বন্ধ রাখা যাবে না।ডিম ধীরে ধীরে হজম হয়। এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য শরীরকে পুষ্টি দেয়। ডায়রিয়ার রোগীর জন্য তাড়াতাড়ি হজম হয় এমন খাদ্যের পাশাপাশি ধীরে ধীরে হজম হয় এমন খাবার তো খাওয়া উচিত। তাই পাতলা পায়খানার রোগীদের জন্য সারাদিনে একটি ডিম অবশ্যই খেতে হবে শরীরকে ভালো রাখতে।
পাতলা পায়খানা হলে কি চিড়া খাওয়া যাবে
চিড়া একটি কার্যকরী খাবার পাতলা পায়খানার রোগীদের জন্য। চিড়া খুব সহজেই হজম হয়। এতে আসের পরিমাণ খুবই কম। পানির অভাব পূরণ করতে এবং ক্ষুধা মেটাতে এটি খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এর ফলে ডায়রিয়া রোগীরা খুব সহজেই সুস্থ হয়ে যায়।
পাতলা পায়খানা হলে পাকা কলা খাওয়া যাবে
বিশেষজ্ঞদের মতে পাতলা পায়খানা হলে কলা খাওয়া যাবে। কলা সহজেই হজম হয় এবং এটি আমাদের শরীরের শক্তি যোগায়। কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা আমাদের শরীরের দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে। তাই পাতলা পায়খানা হলে আমাদের কলা খাওয়া উচিত।
পাতলা পায়খানা হলে কি খাওয়া উচিত
পাতলা পায়খানা হলে সর্বপ্রথম আমাদের খাবার স্যালাইন খেতে হবে এটি খুবই জরুরী শরীরের পানির ঘাটতি পূরণের জন্য। তবে ছয় মাসের নিচে শিশুদের যদি পাতলা পায়খানা হয় তাহলে ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ খাওয়াবেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
ছয় মাসের বেশি বয়সের শিশুদের মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন যতবার পায়খানা বা বমি হবে তারপরে ২০ চামচ খাওয়াতে হবে। এর পাশাপাশি নিয়মিত খাবার ওকে খাওয়াতে হবে।
চিড়ার পানি সকল বয়সী মানুষের জন্য খুবই উপকারী পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে। ভাতের মার এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার পাতলা পায়খানা বন্ধ করার।
সিদ্ধ ভাতের সাথে কাঁচা কলার ডালও খাওয়া যেতে পারে। এর পাশাপাশি ডালিম বা বেদানা খাওয়া যেতে পারে। পাতলা পায়খানা হলে পেঁপে,আপেল ইত্যাদি খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পাতলা পায়খানা বন্ধ করার জন্য এসব খাওয়া যেতে পারে।
পাতলা পায়খানা হলে আমাদের যেসব খাবার পরিহার করতে হবে তা হলো :-চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন প্রকারের এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়া যাবেনা। পাতলা পায়খানা হলে কোন প্রকারের আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা। অধিক তেল যুক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা।
পাতলা পায়খানা হলে কোন প্রকারের শাক খাওয়া যাবেনা। ভাজাপোড়া খাবার শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর যা পাতলা পায়খানা হলে একেবারেই খাওয়া যাবেনা। শিশুদের ক্ষেত্রে বাজারজাত খাদ্য পরিহার করতে হবে পাতলা পায়খানা হলে। তাদের ঘরের তৈরি খাবারই বেশি দিতে হবে।
ডায়রিয়া হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে না
ডায়রিয়া হলে যেসব খাবার খাওয়া যাবেনা তা নিম্নরূপ:-আনারস এ তালিকায় প্রথমেই রয়েছে আনারস যা ডায়রিয়া হলে একেবারেই খাওয়া যাবে না। এটি খাওয়ার ফলে রোগী মৃত্যুর দিকে ধাবিত হবে। এরপর রয়েছে আম, লিচু, জাম্বুরা, তাল ইত্যাদি যা ডায়রিয়া রোগীর জন্য অনেক ক্ষতিকর। ডায়রিয়া হলে এসব খাবার একেবারেই পরিহার করতে হবে।
কি খেলে পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়
পাতলা পায়খানা একটি পানিবাহিত রোগ। এর ফলে আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও পানির ঘাটতি হয়ে থাকে। তাই প্রথমেই ডায়রিয়া হলে আমাদের অবশ্যই খাবার স্যালাইন খেতে হবে।
- তবে ডাবের পানি এটি খুবই কার্যকরী উপাদান পাতলা পায়খানা বন্ধ করার জন্য।
- ভাতের মার এটি একটি কার্যকরী উপাদান পাতলা পায়খানা থেকে মুক্ত হওয়ার।
চিড়ার পানি এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পাতলা পায়খানা বন্ধ করার। এর পাশাপাশি রয়েছে কাঁচা কলা সিদ্ধ করে ডাল হিসেবে সিদ্ধ নরম ভাতের সঙ্গে খাওয়া অথবা কাঁচা কলার ভর্তাও খাওয়া যেতে পারে। এর ফলে খুব সহজেই আমাদের পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়ে যাবে।
শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় পাতলা পায়খানা ডায়রিয়া বা উদ্রামায় এই রোগটি একটি পানি বাহিত রোগ যার ফলে শরীরে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও পানির ঘাটতি হয়ে থাকে। এ সময়ে সঠিক খাবার নির্ধারণ করা খুবই জরুরী আমাদের পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে।
পাতলা পায়খানা হলে আমাদের অবশ্যই প্রতিবার পায়খানা থেকে বের হওয়ার পর ভালো করে দুই হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এছাড়াও খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, চিড়ের পানি খেতে হবে। যা আমাদের পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে সাহায্য করবে।
তবে যেকোনো ধরনের রোগকেই আমরা প্রতিরোধ করতে পারি সচেতনতার মাধ্যমে। আমাদের বেশি বেশি সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাহলে ডায়রিয়া জনিত রোগ আমাদের দেশে অনেকাংশে কমে আসবে। তাই আমরা এ রোগ প্রতিরোধ করতে নিজেরাও সচেতন হব ও অন্যকেও সচেতন করার প্রচেষ্টাই থাকবো।
إرسال تعليق