সুপ্রিয় দর্শকবৃন্দ পেয়ারার থেকেও বেশি উপকার পেয়ারার পাতায়। এ কথাটা শোনার পর হয়তো বা আপনারা অনেক অবাক হয়ে গেলেন। আসলে এই কথাটা সত্য যে পেয়ারার থেকে পেয়ারার পাতার গুনাগুণ অনেক বেশি। আর পেয়ারার গাছটি সব ধরনের মানুষের বাসায় দেখা যায়। আর অনেকেই পেয়ারা খেতে অনেক পছন্দ করি কিন্তু পেয়ারা পাতা নয়।
কারণ অনেক ব্যক্তি জানেনা পেয়ারার পাতা আমাদের কি ধরনের উপকার করে। পেয়ারার পাতায় প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকে। এই পেয়ারা পাতাতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এছাড়াও এখানে কয়েক ধরনের প্রয়োজনীয় মিনারেল থাকার কারণে এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। পেয়ারা পাতা প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত।
খালি পেটে পেয়ারা পাতা খাওয়ার উপকারিতা
আমরা সকলেই পেয়ারার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানি। তবে পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। অবহেলিত এই পাতা একাধিক রোগের মহা ঔষধ। আপনি যদি নিয়মিত পেয়ারা পাতা খেতে শুরু করেন তাহলে প্রচুর উপকারিতা পাবেন।
এ পাতায় রয়েছে ভিটামিন খনিজ উপাদান ও আন্টি অক্সিডেন্ট এছাড়া প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও লাইকোপেন পাওয়া যায়। এর ফলে সুগার কোলেস্ট্রলসহ একাধিক রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে এর জুরি মেলা ভার। আমাদের সকলের পরিচিত এই পেয়ারা পাতা বিশেষ পদ্ধতিতে গ্রহণ করলে প্রচুর উপকারিতা পাওয়া যায়।
চায়ের মধ্যে পেয়ারা পাতা খাওয়ার রেওয়াজ অনেক দেশে প্রচলিত রয়েছে। এতে প্রচুর উপকারিতা পাওয়া যায় যেমন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমানে প্রচুর মানুষ টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আমাদের শরীরে ইনসুলিন হরমোন এর কার্যকারিতা কমলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের খাদ্য তালিকায় এমন কিছু খাদ্য রাখা প্রয়োজন যা ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
এক্ষেত্রে পেয়ারা পাতা দারুনভাবে সাহায্য করে। আসলে এই পাতায় রয়েছে এমন কিছু এন্টি ডায়াবেটিক উপাদান যা সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি এই পাতাটি ফুটিয়ে সেবন করে তাহলে অবশ্যই উপকারিতা পাবেন।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে খালি পেটে চায়ের সাথে পেয়ারা পাতা খেতে পারেন। কোলেস্টরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে হৃদরোগ সহ নানান রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই রক্তে অবশ্যই কোলেস্টরলের মাত্রা ঠিক রাখা প্রয়োজন এবং এই বিষয়ে আমাদের অবশ্যই সকলকে সচেতন হতে হবে।
পেয়ারা পাতায় থাকা ফাইবার আমাদের রক্তে থাকা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আমাদের সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে অনেকাংশে। খালি পেটে পেয়ারা পাতা ওজন কমাতে সহায়তা করে। অতিরিক্ত ওজন আমাদের ডায়াবেটিস হাই ব্লাড প্রেসার ও হৃদরোগের মতো সমস্যা তৈরি করে। ওজন কমাতে হলে আমাদের অবশ্যই পেয়ারা পাতা খাওয়া উচিত। তবে ওজন কমাতে হলে অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়াম ও ডায়েট কন্ট্রোল করতে হবে।
বর্তমান সময়ে অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগে থাকেন বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার ফলে সমস্যার সমাধান হয় না। আপনি যদি নিয়মিত পেয়ারা পাতা খাওয়া শুরু করেন তাহলে অবশ্যই উপকার পাবেন। প্রাকৃতিক এই পাতায় রয়েছে লেক্সজেটিভ উপাদান যা আপনার পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে এবং কম মসলাও ঝাল যুক্ত খাবার খেতে হবে। হজম ক্ষমতার উন্নত করে খালি পেটে খাওয়া পেয়ারা পাতা। আপনার পাচনতন্ত্র যদি সঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে আপনার প্রচুর সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন পেট ব্যথা, গ্যাস, এসিডিটি ইত্যাদি।
আমাদের সকলের পরিচিত এই পেয়ারা পাতা হজম ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে পেয়ারা পাতা দিয়ে তৈরি চা খেতে পারেন তাহলে আপনার হজমের সকল সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
দাঁতের ব্যথা কমাতে পেয়ারা পাতা হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার। কারণ পেয়ারা পাতাতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য তাই ব্যথা কমাতে এই পাতা ভীষণভাবে কার্যকরী। দাঁতে ব্যথা অনুভব করলে অবশ্যই পেয়ারা পাতা মুখে চিবিয়ে রাখুন দেখবেন আপনার দাঁতে ব্যথা কমে গেছে অনেকাংশে। তবে অতিরিক্ত ব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
পেয়ারা পাতার উপকারিতা চুলের জন্য
চুল সুন্দর তো আপনি সুন্দর। তাই চুলের যত্নে সব সময় আমাদের টেনশন এ থাকতে হয়। আর চুলের সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো চুল পড়া। যা ছেলে অথবা মেয়ে দুজনের জন্যই কষ্টকর একটা বিষয়। এই চুল পড়ার সমস্যার সমাধানে পেয়ারা পাতার ব্যবহার করে পেতে পারেন একটি জাদু করি সমাধান।
পেয়ারা পাতায় রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যান্টি মাইট্রভিয়াল উপাদান রয়েছে যা মাথার তালুর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এমন কি এটি মাথায় খুশকি হওয়া থেকে রোধ করে। ভিটামিন সি মাথায় ফলিক অ্যাসিডের ভারসাম্য রক্ষা করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
চুল পড়া বন্ধ করতে হলে এক লিটার পানি ফুটাতে দিন ফুটন্ত পানিতে এক মুঠো পেয়ারা পাতা ফেলে দিন এরপর তা বিশ মিনিট জ্বাল দিন। এরপর নামিয়ে ফেলুন। এখন যেভাবে ব্যবহার করবেন। প্রথমে চুল ভালো করে শ্যাম্পু করে নিন এরপর চুল কিছুটা শুকিয়ে এলে চুলের উপরে পেয়ারা পাতার পানি ঢালুন। এরপর এটি ১০ মিনিট মাথার তালুতে মেসেজ করুন। এরপর দুই ঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন।
চুল পড়া রোধ করতে এভাবে সপ্তাহে দুই অথবা তিন দিন করতে থাকুন দেখবেন পেয়ারা পাতা ব্যবহারের ফলে আপনার চুল হয়ে উঠেছে অনেক ঘন ও প্রাণ উজ্জ্বল। স্বাস্থ্যকর লম্বা চুল প্রায় সব মেয়েদের পছন্দের। তাই আমরা অনেকেই বিভিন্নভাবে চুলের যত্ন নেওয়া শুরু করি। কিন্তু কোন কিছুতেই কোন কাজ হয় না।
পেয়ারা পাতার রস চুল গজাতে সহায়তা করে। আরেকটি বিশেষ উপকারিতা হলো পেয়ারা পাতা টাক মাথায় চুল গজাতেও সহায়তা করে। পেয়ারা পাতায় থাকা ভিটামিন বি নষ্ট হয়ে যাওয়া হেয়ার রুটের কোষ মেরামত করে চুলকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে। এভাবে কিছুদিন করলে আপনার চুলের পরিবর্তন আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
পেয়ারা পাতার অপকারিতা
পেয়ারা পাতা একটি ঔষধি গুণ সম্পন্ন পাতা এ পাতায় উপকারিতার পরিমাণেই বেশি। তবে এর অপকারিতাও রয়েছে। আপনি যদি মাত্রা অতিরিক্ত পেয়ারা পাতা সেবন করে থাকেন তাহলে এটি আপনার উপকারের থেকে অপকার বেশি করবে।
প্রতিটি প্রাকৃতিক উপাদান খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে। যদি তা আমরা মাত্রা অতিরিক্ত সেবন করে থাকি তাহলে এটি আমাদের শরীরের জন্য বয়ে আনবে বিপদ। তাহলে জেনে নেই পেয়ারা পাতার অপকারিতা।
আমরা জানি যে পেয়ারা পাতা আমাদের শরীরে ইনসুলিনের হরমোন নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে কিন্তু আমরা যদি এটি মাত্র অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি এক্ষেত্রে পেয়ারা পাতা আমাদের ইনসুলিনের মাত্রা অনেক কমিয়ে দিবে যার ফলে আমাদের শরীরে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
পেয়ারা পাতা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে। কিন্তু আমরা যদি পরিমাণে অনেক বেশি পেয়ারা পাতা রস বা পেয়ারা পাতা খেয়ে ফেলি তাহলে আমাদের রক্তচাপ অনেক কমে যাবে এবং আমাদের শরীরে রক্তচাপ অনেক কমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের পেয়ারা পাতা খাওয়ার দিকে অবশ্যই একটু সচেতন হতে হবে। যদি গর্ভবতী মহিলা বা শিশুকে পেয়ারা পাতা খেতে হয় তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
পেয়ারা পাতা খাওয়ার নিয়ম
পেয়ারা পাতা প্রতিদিন সকালে আপনি দুটো করে চিবিয়ে খেতে পারেন। এভাবে পেয়ারা পাতা খেলে আপনার গ্যাস, এসিডিটি পেটের যে কোন সমস্যা সর্দি, কাশি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে।
পেয়ারা পাতা চা বানিয়েও খেতে পারেন হালকা তাপে চার হতে পাঁচটি পেয়ারা পাতা ৫ মিনিট ধরে সিদ্ধ করে তা ভালো করে ছেঁকে নিয়ে খেতে পারেন এটি ডায়াবেটিস ইনসুলিন হরমোনের নিয়ন্ত্রণ, ও পুরুষের শুক্রাণুর বৃদ্ধিতে ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
পেয়ারা পাতা এলার্জি
পেয়ারা পাতা অনিদ্রা দূর করে ও ছেলেদের নতুন শুক্রাণু তৈরি করে। এছাড়াও পেয়ারা পাতায় রয়েছে কিছু অসাধারণ স্বাস্থ্যগুণ। এছাড়াও পেয়ারা পাতা এলার্জির ওষুধ হিসাবে গ্রাম গঞ্জের মানুষেরা হাজারো বছর ধরে ব্যবহার করে চলেছে। এলার্জি খুব বিরক্তিকর একটি রোগ। বর্তমানে এলার্জি নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়।
এলার্জির কারণে আমরা আমাদের অনেক প্রিয় জিনিস খেতে পারি না যেমন পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, ইলিশ। এছাড়াও ধুলাবালি রোদ অনেক ঠান্ডা সবকিছুতেই শরীরে এলার্জি হচ্ছে। এই এলার্জি দীর্ঘদিন ধরে আমরা পুষে রাখছি অথবা দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খাচ্ছি, ঔষধ লাগাচ্ছি কিন্তু কোন কিছুতেই কোন কাজ হচ্ছে না।
এলার্জিতে ভুক্তভোগী মানুষের মধ্যে সবসময় একটি চাওয়া থাকে আমি কিভাবে দূর করব আমার এলার্জি। এলার্জি দূর করতে আমরা সব সময় যেমন বিভিন্ন ঔষধের সন্ধান করে থাকি মনে মনে। আবার অনেক ওষুধ খেয়েছেন। তাদের জন্য পেয়ারা কথা হলো একটি আশীর্বাদ। যা মাত্র এক সপ্তাহে ব্যবহারে বহু পুরনো এলার্জি দূর হয়ে যাবে বা চিরতরে চলে যাবে।
এলার্জি দূর করতে চার পাঁচটি কচি পেয়ারার পাতা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে এই চার পাঁচটি পেয়ারার পাতা ব্যালেন্ডার ব্লেড করে নিতে পারেন অথবা শিল পাটায় বেটে পেস্ট করে নিতে পারেন। এই পেস্টের সাথে হাফ চা চামচ পরিমাণ কালো জিরে গুঁড়ো ও পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে রাতে খাবার খাওয়ার আধাঘন্টা পর খেতে হবে।
এভাবে ৭ থেকে ১০ দিন নিয়মিত খাবেন। এর ফলে আপনার যত পুরনো এলার্জি চুলকানি হোক না কেন তা ভালো হয়ে যাবে। যদি কেউ এভাবে পেয়ারা পাতা না খেতে চান তাহলে পেয়ারার পাতার চা বানিয়ে খেতে পারেন এটিও এলার্জি দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
সর্বশেষ পরামর্শ
পেয়ারা পাতা হাঁচি-কাশি, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, এলার্জি দূর করতে,যৌনশক্তি বৃদ্ধি, শুক্রাণুর পরিমাণ বৃদ্ধি করে প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ছেলেদের, ক্যান্সার সহ বিভিন্ন জটিল রোগের নিয়ন্ত্রণে, ডায়াবেটিসের ইনসুলিন হরমোন নিয়ন্ত্রণ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পেটের সকল সমস্যার সমাধান করে পেয়ারা পাতা।
পেয়ারা পাতাতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি সিক্স, ফাইবার, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড এছাড়াও আরো বিভিন্ন রকমের ভিটামিন যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে। পেয়ারা পাতা ব্যবহারের সময় আমাদের অবশ্যই সচেতন এবং একজন বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমাদের পেয়ারা পাতা সেবন করতে হবে। পেয়ারা পাতা সঠিক নিয়মে সঠিক সময়ে ব্যবহারের ফলে আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমে যাবে এবং ঘটবে শরীরের উন্নতি।
إرسال تعليق