সুপ্রিয় দর্শকবৃন্দ চুল মানুষের সৌন্দর্যের প্রতীক। আপনি যতই সুন্দর হন না কেন যদি আপনার অধিক হারে চুল পড়া শুরু করে তাহলে আপনার সৌন্দর্য দিন দিন কমতে থাকবে। আপনার বয়স যতই কম হোক না কেন আপনাকে দেখতে অনেকটা বয়স্ক মনে হবে। তাই যার চুল পড়ে তারাই জানে চুল পড়ার অশান্তি কতটুকু।
কত মানসিক চাপে পড়তে হয় এই চুল নিয়ে। মাথায় চুল গজানোর উপায় জানার আগে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে মাথার চুল পরে যায় কেন এবং টাক সৃষ্টি হয় কেন। আজকাল কিশোরী সহ সকল বয়সী মানুষের একটা কমন সমস্যা হচ্ছে অতিরিক্ত চুল পড়া।
এই সমস্যা সকল বয়সী মানুষের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ। সাধারণত একজন মানুষের দৈনিক ১০০ টির মত চুল পড়তে পারে সেগুলো আবার গজিয়েও যায় কিন্তু একশটির বেশি চুল পড়লে তার কারণ জানা জরুরী। এর একটি কারণ হতে পারে পর্যাপ্ত পুষ্টির ঘাটতি। তরুণ বয়সের ছেলেমেয়েরা অনেক কম পরিমাণে খাওয়া-দাওয়া করে যার ফলে শরীরে সুষম খাদ্যের ঘাটতি হতে পারে।
মাথার ত্বকে কিছু ছত্রাকের আক্রমণের ফলেও চুল পড়তে পারে। দীর্ঘ সময় স্যাঁতসাঁতে চুল ঢেকে রাখার ফলে এই ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে। মাথায় চুলকানো বা মাথায় লাল হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা দেখলে বুঝতে হবে মাথায় ছত্রাকের সংক্রমণ হয়েছে। পানিতে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকলেও মাথার চুল পড়তে পারে। তবে শুধু আয়রন না এর সঙ্গে পানিতে আর্সেনিক থাকলে চুল পরতে পারে।
রাসায়নিক পদার্থ বারবার ব্যবহার করে চুল রং করা ব্লিজ করা বা স্ট্রেইট করার মত কারণে চুলের ক্ষতি হতে পারে। এর ফলে চুল ভেঙ্গে যায় বা পরে যায়। আয়রন বা গরম ব্লো ড্রইং থেকে অতিরিক্ত তাপ দেওয়ার ফলেও চুলের ক্ষতি হয়। শ্যাম্পুতে অনেক সময় সালফার যুক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় কিন্তু এই রাসায়নিক এর কারণে মাথা ত্বক থেকে তেল ধুয়ে যায় এর ফলে চুল শুকিয়ে যায়, চুলের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন ভেঙে যায়। চুলের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং চুল ভেঙে যায়।
চুলে টানটান করে হেয়ার স্টাইল করার কারণে চুলের ফলিকল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ও এর ফলে চুল পরে যেতে পারে। ভেজা অবস্থায় চুলের স্টাইল করলেও চুল ভেঙ্গে যেতে পারে। হঠাৎ কোনো মানসিক চাপ, যেমন কোনো অস্ত্রপাচার ঘটনার মধ্য দিয়ে যাওয়া গুরুতর অসুস্থ বা উচ্চ জ্বরের মধ্যে যাওয়ার কারণে সাময়িকভাবে চুল পড়ে যেতে পারে।
চুল গজানোর উপায়
নতুন চুল গজানোর জন্য আগে আমাদের অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে যে আমাদের চুল কেন পড়ে গেল বা পড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন চিকিৎসা ওষুধ ও থেরাপির মাধ্যমে নতুন চুল গজানো যায়। পুষ্টির অভাব পরিবেশ দূষণ ও চুলের উপর বিভিন্ন ধরনের স্টাইলিং সবকিছু মিলিয়ে আমাদের চুল পড়া যেন এক নিত্য নৈমিত্তিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চুল পরাটি খুবই একটি স্বাভাবিক ব্যাপার কিন্তু যতগুলো চুল পড়ছে তার সঙ্গে যদি চুল গজানোর হার টা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তাহলে কিন্তু চুল পড়ার এই সমস্যা টা আমাদের খুব বেশি পড়ে না। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় আমাদের যে হারে চুল পড়ছে সে হারে চুল গজাচ্ছে না তখনই শুরু হয় চিন্তা।
আজকে আমি আপনাদের জানাবো চুল গজানোর কিছু উপায় সম্পর্কে যার কোন ক্ষতিকারক দিক নেই। প্রথমে চুল গজানোর প্রথম উপায় হলো স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া । স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে ভিটামিনের অভাব থাকবে না এর ফলে চুল পড়া বন্ধ হবে ও নতুন চুল গজাবে।
আবার ভিটামিন জাতীয় ওষুধ যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, আয়রন, জিংক, ভিটামিন ই, জিংক ও মেগা ফ্যাটিয়াছি সেবন করেও শরীরের ঘাটতি পূরণ করতে পারি এর ফলেও চুল পড়া বন্ধ হয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে অনেকাংশে।
মাথায় যেন নতুন চুল গজাতে পারে এজন্য আমাদের মাথার ত্বকের পরিচর্যা করতে হবে। মাথায় প্রতিদিন স্যাম্পু না করে একদিন পরপর স্যাম্পু করতে হবে। এবং শ্যামপুর পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। কন্ডিশনার ব্যবহারের ফলে আমাদের ড্রাই চুলে নিয়ে আসবে প্রাণ। এর ফলে আমাদের চুল ঘন দেখাবে ও চুল গজানোর সম্ভাবনা বেড়ে যাবে অনেকাংশে।
চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
চুল পড়ার একটি প্রধান কারণ হলো ব্লাড বা রক্ত সঞ্চালন সঠিক ভাবে না হওয়া। সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন না হলে চুল পড়তেই থাকবে। এজন্য আমাদের অবশ্যই মাথা খুব ভালোভাবে মেসেজ করতে হবে। আমরা যখন মেসেজ নেব তখন আমাদের মাথায় রক্ত সঞ্চালন অনেক ভালো হবে অক্সিজেন টা সেখানে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।
নিউট্রিয়ানস বা ভিটামিন যা দরকার সেগুলো রক্তের সাহায্যে সেখানে পৌঁছাবে। চুলকে ভালো রাখতে বা চুল পরা বন্ধ করতে মেসেজ একটি কার্যকারী সমাধান। সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত এক্সারসাইজ চুল পড়া বন্ধ করে চুলকে করবে অনেক ঘন ও প্রাণ উজ্জ্বল।
নতুন চুল গজানোর উপায়
প্রতিটি মানুষ এই জীবনে কোন না কোন পর্যায়ে চুল পড়া সমস্যায় ভুগে থাকেন। এতে এমন একটি সমস্যা যা অনেকের জন্য মানসিক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের ঠোট হাতের তালু বা পায়ের পাতা ছাড়া পুরো শরীরেই পশম বা চুল রয়েছে যা আমাদের শরীরকে নানাভাবে সুরক্ষা প্রদান করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুল পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায় অনেক বেশি।
মূলত আমাদের চুল গজানোর কার্যকর যে প্রক্রিয়া তাকে এনাজেইন ফেইস বলা হয়। এনাজেইন ফেইস কোন কারণে স্মিত হয়ে গেলে হেয়ার ফোলিকল থেকে দুর্বল ও পাতলা চুল গজাতে থাকে। এনাজেইন ফেইস যদি একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় তাহলে হেয়ার ফলিকল থেকে নতুন চুল গজানো বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর শুরু হয় চুল পাতলা হওয়া ও টাক হওয়া। বেশি বয়স হওয়ার আগেই আমাদের চুল পড়া সমস্যায় যেন না পরতে হয় সেজন্য খাবারের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। যেমন ফলিক এসিড, ফেইড এসিড ও বাইওটিন যুক্ত খাবার এই সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
এছাড়াও ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করেও নতুন চুল গজানো সম্ভব। যেমন জবার রস, মেথির তেল, পেঁয়াজের রস ব্রাহ্মী ,শিকা কাইস, রোজবেরি,লাবেন্ডার অয়েল, গ্রিন টি ইত্যাদির ব্যবহার ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। তবে এসব উপাদান ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই সঠিক নিয়ম জেনে ব্যবহার করবেন। কিন্তু মনে রাখবেন যদি অস্বাভাবিকভাবে চুল ওঠে যায় তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে আমাদের পরামর্শ করতে হবে।
টাক মাথায় চুল গজানোর উপায়
আপনার চুলগুলো আপনার সৌন্দর্যের একমাত্র কারণ। আর চুল যখন ঝরতে শুরু করে তখন আপনার মাথায় টাক দেখা যায়। যেভাবে প্রত্যেক গাছের শিকড় থাকে যা থেকে সে খাদ্য পানি গ্রহণ করে বড় হয় ও ভালো থাকে ঠিক সেভাবেই আমাদের চুলের ও শিকড় থাকে আর আমাদের চুল সেখান থেকে পুষ্টি নিয়ে থাকে।
আর এই পাটটিকে হেয়ার ফলিকল বলা হয়। আমাদের চুলের সাধারণত তিনটি ধাপ থাকে প্রথম ধাপ গ্রোথের ধাপ। এই ধাপে চুল অনেক বড় হয় যেমন ১৭ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত আমাদের শরীরের বিকাশ হয় ঠিক তেমনি তিন থেকে সাত বছরের মধ্যে আমাদের চুল বৃদ্ধি হতে থাকে। আমাদের শরীরে যত চুল আছে তার মধ্যে ৯০ শতাংশ চুল এই ধাপেই তৈরি হয়।
এরপরই শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপ যাকে কেটাজেন বলা হয়। এই ধাপটি দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত থাকে। আর সময় চুল খুব কম বড় হয়। আর ফলিকল খুব ছোট হয়ে যায়। এরপর তৃতীয় ধাপ শুরু হয় টেলোজেন এই ধাপে চুলের বৃদ্ধি একেবারেই থেমে যায় এবং আমাদের চুল ফলিকল থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে এটাকে আমরা চুল ঝরে যাওয়া বলি।
এ ক্ষেত্রে প্রায় প্রতিদিন আমাদের শরীর থেকে একশো টারও বেশি চুল ফলিকল থেকে বেরিয়ে আসে আর সেখান থেকে দ্বিতীয়বার চুল তৈরি হওয়া শুরু হয় আর এই প্রক্রিয়া সারা জীবন চলতেই থাকে। পুরনো চুল ঝরে যায় আর নতুন চুল গজায়। আমাদের চুল সব ধরনের পুষ্টিগুণ পায় ফলিকল থেকে।
তবে মানুষের চুলের যে ফলিকল তার আস্তে আস্তে ছোট হয়ে যায় এবং তাদের চুল সঠিক পরিমাণে পুষ্টিগুণ পায় না। আর সে কারণে চুল ঝরে যাওয়ার পর আর গজায় না। আর এটাকেই বলা হয় টাক পড়া।
আমাদের যে চুল পড়ে প্রথমে তাকে আমাদের চিনতে হবে একটা হলো বংশগত চুল পড়া ও আরেকটি হলো লাইফ স্টাইল চুল পড়া। বংশগত চুল পড়া বলতে সাধারণত আপনার বংশের যদি কারো টাক থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই বংশ-পরম্পরায় সেটা আপনারও হবে বা আপনারা চুল পড়বে।
আরেকটি হলো লাইফ স্টাইল হেয়ার ফল যা আপনার খাওয়া-দাওয়া উপর নির্ভর করে। যদি আপনি এমন কোন কিছু সেবন করেন যাতে জিএসটি হরমোনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে বা যেটা আপনার জিএসটি হরমোনকে বাড়িয়ে দেয় তাহলে আপনার চুল পড়া অনেক বেশি হবে।
চুল পড়া থেকে বাঁচতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকেও কয়েকটা বাজে কাজ করা বন্ধ করতে হবে। প্রথমে আপনাকে ধূমপান বন্ধ করতে হবে মাদক জাতীয় দ্রব্য সেবন বন্ধ করতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়াম ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। টাক মাথায় চুল গজাতে হলে কিছু ঔষধ আছে যা টাক মাথায় চুল গজাতে সাহায্য করে অনেকাংশে। ওষুধের নামগুলো হলো:
- ট্রুগেইন।
- মিনক্সজেডি স্প্রে।
- নিউ হেয়ার লোশন।
- ফিনেসট্রাইট।
- মিনেক্সডেল স্প্রে।
সর্বশেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় যে আমাদের সচেতনতা ও সুষম খাদ্য গ্রহণ পর্যাপ্ত ঘুম নিয়মিত ব্যায়াম টেনশন থেকে দূরে থেকে আমাদের চুল উঠা রোধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।
إرسال تعليق