আপনার নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় কি নিঃশ্বাস নিতে একটু কষ্ট হচ্ছে? এমনটা হয়তো হচ্ছে কারণ আপনার নাকের ভেতর মাংস বেড়ে গেছে। মানে আপনার পলিপাসের সমস্যা হচ্ছে। যদি এমনটা হয় তাহলে অবশ্যই আপনার উচিত হবে নাকের পলিপাসের এলোপ্যাথিক ঔষধ এর দ্বারা এটি ভালো করা।
নাকের পলিপাসের এলোপ্যাথিক ঔষধ এই আর্টিকেলে আমি নাকের পলিপাস হলে করণীয় কি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনারা আমার লেখা নাকের পলিপাসের এলোপ্যাথিক ঔষধ এই আর্টিকেলটি পড়ে পলিপাস কিভাবে ভালো করবেন বুঝতে পারবেন।
পলিপাস কি
সাধারণ কথাই পলিপাস বলতে আমরা বুঝি নাকের ভেতরের অংশের মাংস বেড়ে যাওয়াকে। আমাদের নাকের ভেতরের মাংস যখন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায় তখন আমরা মনে করি আমাদের পলিপাসের সমস্যা হয়েছে। পলিপাস এই শব্দটি এসেছে গ্রীক থেকে। পলিপাস বলতে বোঝায় কোন একটি শ্লেষ্মা ও ঝিল্লির টিস্যুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।
আমরা অনেকেই মনে করি পলিপাসের সমস্যা শুধুমাত্র নাকেই হয়ে থাকে। কিন্তু এ ধরনের সমস্যা শুধুমাত্র নাকেই নয় আমাদের শরীরের অন্যান্য অংশেও হতে পারে। যেমন জরায়ু মুখ, ক্ষুদ্রান্ত, কণ্ঠস্বর। মানুষের শরীরে সাধারণত দুই ধরনের পলিপাস দেখা দিয়ে থাকে। যেমনঃ
- নিওপ্লাজম
- নন-নিওপ্লাস্টিড
- নিওপ্লাজমঃ এই পলিপাস কে টিউমার বলা হয়ে থাকে। এই ধরনের পলিপাস দেখা দিলে এটি একটু চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
- নন-নিওপ্লাস্টিডঃ এই পলিপাস কে মৃদু পলিপাস বলা হয়ে থাকে। এ ধরনের পলিপাস অনেক বছর ধরে গুপ্ত থাকে এবং সেই রকম কোন সমস্যা দেখা দেয় না।
নাকের পলিপাস কেন হয়
অনেক মানুষ রয়েছে যাদের পলিপাসের সমস্যা রয়েছে কিন্তু তারা সেই বিষয়ে জানে না। কারণ পলিপাস এমন এক ধরনের সমস্যা যার কারণে তেমন খুব একটা সমস্যা দেখা দেয় না। পলিপাস হওয়ার অনেক বছর পর্যন্ত চিকিৎসা না করলেও খুব একটা সমস্যা হয় না। এখন আমরা জানবো নাকের পলিপাস কেন হয়।
নাকের পলিপাস হওয়ার কার্যকরী কারণ এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। এখন পর্যন্ত এ বিষয় নিয়ে গবেষণা চলছে। কিন্তু তাও বলা যায় যে, যে সকল ব্যক্তির ঘন ঘন ঠান্ডা লাগে সর্দি হয় ও যে সকল ব্যক্তির নাকের এলার্জি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পলিপাসের সমস্যা বেশি দেখা যায়। কিছু কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় ফাংগাল ইনফেকশন এর কারনে যে এলার্জি হয় তা থেকে সাইনাস জুড়ে পলিপাস সৃষ্টি হয়ে থাকে।
এলার্জির ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় যে যে সকল ব্যক্তির নাকের এলার্জির সমস্যা দেখা দেয় সে সকল ব্যক্তির ফুসফুসের এলার্জির অর্থাৎ হাঁপানির সমস্যা ও দেখা দেয়। আবার যে সকল ব্যক্তির ফুসফুসের এলার্জি রয়েছে সে সকল ব্যক্তির ক্ষেত্রে নাকের এলার্জি ও দেখা দেয়। তাই অবশ্যই যেকোনো ধরনের এলার্জি হোক না কেন আমাদের এলার্জি ভালো করার চেষ্টা করতে হবে।
নাকের পলিপাস এর লক্ষণ
কোন ব্যক্তির যদি পলিপাসের সমস্যা হয় তাহলে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যে সকল লক্ষণ দেখে আপনি খুব সহজে বুঝতে পারবেন আপনার নাকে পলিপাস হয়েছে। সেই সকল লক্ষণগুলো মৃদু হয়ে থাকে। এখন জেনে নিন নাকের পলিপাস এর লক্ষণ গুলো কি কি।
- নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
- নাক থেকে রক্ত পড়তে পারে
- কখনো কখনো সাইনাসের মাথা ব্যথা হবে
- কোন কিছুর গন্ধ পাওয়া যাবে না
- রাতে নাক ডাকা বৃদ্ধি পাবে
- উপরের চোয়ালে ব্যথা হতে পারে
- নাক দিয়ে জল পড়ার সমস্যা দেখা দেবে
- প্রচন্ড মাথা ব্যথা হতে পারে
- নাক ও তালু চুলকানো
- নাকে ব্যথা হতে পারে
- অনবরত হাঁচি হতে পারে
- শরীর শুকিয়ে যায়
- অনেক সময় দেখা যায় নাকের মাংস বাইরে বের হয়ে গেছে
নাকের পলিপাস হলে করনীয় কি
কোন ব্যক্তির যদি পলিপাসের সমস্যা হয় তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে এই সমস্যা ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি পলিপ এর আকার ছোট থাকে তাহলে নাক দিয়ে ভাপ নিয়ে এবং নাকের ড্রপ ব্যবহার করে অথবা এলার্জির ওষুধ খাওয়ার মাধ্যমেও রোগী উপকার পেতে পারেন।
এ সকল পদ্ধতির অবলম্বন করার পরও যদি কোন রকম পরিবর্তন লক্ষ্য করা না যায় তাহলে অবশ্যই অপারেশন করাতে হবে। এই ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোগীর পলিপ এর আকার ও অবস্থান বুঝে চিকিৎসকগণ বিভিন্ন রকম পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
তবে বর্তমানে পলিপ এর জন্য পলিপেকট্মি এবং এন্ডোসকপি এই দুইটি অপারেশন খুব বেশি জনপ্রিয়। তাই আপনার যদি পলিপাসের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই দেরি না করে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
নাকের পলিপাস এর ঘরোয়া চিকিৎসা
অনেক ব্যক্তি রয়েছে যারা যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য ঘরোয়া পদ্ধতিতে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তারা চান ঘরে বসে প্রাকৃতিক উপায়ে যেকোনো ধরনের সমস্যা সমাধান করতে। আপনার চিন্তাধারা যদি এরকম হয়।
ঘরে বসে প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে পলিপাসের মতো সমস্যা সমাধান করতে চান তাহলে নিচের অংশ পড়ুন। আমি নিচে আপনাদের সুবিধার জন্য নাকের পলিপাস এর ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করলাম।
আদাঃ নাকের পলিপাসের সমস্যা কমানোর জন্য আদা একটি চমৎকারী উপাদান। আদার ভেতরে উপস্থিত উপাদান আমাদের পলিপাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি বাসায় বসে ঘরোয়া পদ্ধতিতে পলিপাস কমাতে চান তাহলে প্রতিদিন খাবার তালিকায় আদা যোগ করুন। নিয়মিত আদা চা খেয়ে পলিপাস কমানোর চেষ্টা করতে পারেন।
পেপারমিন্টঃ কোনরকম অপারেশন ছাড়াই বাসায় বসে পলিপাস কমানোর চেষ্টা করলে পেপারমিন্ট আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে। যেহেতু পলিপাস সর্দি জাতীয় সমস্যার কারণে বেশি হতে পারে তাই বলা যায় যে সর্দির ক্ষেত্রে মেন্থল অনেক বেশি কাজ করে। তাই সর্দির সমস্যা কমাতে এবং পলিপাস কম করতে পেপারমিন্ট অনেক বেশি উপকারী।
রসুনঃ রসুনের উপকারিতা আমাদের জীবনে কতটুকু তা আমরা সকলেই জানি। আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা রসুন খেয়ে থাকি। রসুনে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল যা পলিপাস কমাতে অনেক বেশি সাহায্য করে।
তাই আপনি যদি চান পলিপাস এর সমস্যা সমাধান করতে তাহলে আজ থেকেই নিয়মিত রসুন খাওয়া শুরু করুন। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে অথবা দিনের যেকোনো সময় রসুন খেতে পারেন।
হলুদঃ হলুদকে প্রাকৃতিক ঔষধ ও বলা হয়ে থাকে। কারণ প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন রকম সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা রয়েছে হলুদের। হলুদ যে কোন ধরনের ব্যথাকে উপশম করতে এবং শ্বাসনালীর প্রদাহ ও জ্বালা কমাতে অনেক বেশি সাহায্য করে। পলিপাস এর মত সমস্যার সমাধানের জন্য আপনি প্রতিদিন হালকা কুসুম গরম দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খাওয়া শুরু করতে পারেন।
গোলমরিচঃ পলিপাস কম করতে গোলমরিচ অনেক বেশি সাহায্য করে। কারণ গোলমরিচও রয়েছে ক্যাপসাইসিন যা সাইনাস এর মত সমস্যা দূর করতে অনেক বেশি সাহায্য করে। আপনি যেকোনো খাবারের সাথে মিশিয়ে গোলমরিচ খেতে পারেন। এছাড়াও গোলমরিচ দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন। আপনি যেভাবেই গোলমরিচ খান আপনার পলিপাসের সমস্যা অনেকটা কমে আসবে।
ধূমপান থেকে বিরত থাকুনঃ পলিপাসের সমস্যা কমানোর জন্য অবশ্যই আপনাকে বিষাক্ত ধোয়া এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। যেমন তামাকের ধোঁয়া, সিগারেটের ধোঁয়া, রাসায়নিক ধোঁয়া ইত্যাদি। যদি কোন পলিপাসের রোগী ধূমপানে অভ্যস্ত থাকেন তাহলে অবশ্যই পলিপসের সমস্যা কমানোর জন্য তাকে ধূমপান থেকে দূরে থাকতে হবে।
বিভিন্ন রকম শ্বাসযন্ত্রের চিকিৎসা করাতে হবেঃ আপনি যদি আপনার পলিপাসের সমস্যা কমাতে চান তাহলে অবশ্যই প্রথমে আপনাকে হাঁপানি অথবা এলার্জি জাতীয় সমস্যা থাকলে সেগুলো কন্ট্রোলে রাখতে হবে। কারণ পলিপাস হওয়ার প্রধান কারণ এগুলো দেখা দেয়। তাই এগুলো যদি কন্ট্রোল করতে না পারেন তাহলে পলিপাস কখনোই কমবে না।
নাকের পলিপাসের এলোপ্যাথিক ঔষধ
যেকোনো ঔষধ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভালো। তাই আপনি যদি নাকের পলিপাসের এলোপ্যাথিক ঔষধ সম্পর্কে জানতে চান তাহলে অবশ্যই একজন নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ কাছে পরামর্শ নিতে পারেন। আমি শুধুমাত্র আপনাদের জানার সুবিধার্থে নাকের পলিপাসের এলোপ্যাথিক ঔষধ এর নাম তুলে ধরলাম।
- Seclo 20
- Fluoxetine
- Flexi
- Deslor
- Budesonide
- Azin 500
- Filmet 200 mg
- Beclometasone
- TB Fexo 120/180
- TB Open 500mg
- Cap Doxicap 100mg
আশা করছি উপরে উল্লেখিত ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজে আপনার পলিপাসের সমস্যা কমে আসবে।
লেখকের মন্তব্য
আশা করছি আপনারা নাকের পলিপাসের এলোপ্যাথিক ঔষধ এই আর্টিকেলটি পড়ে প্রয়োজনীয় তথ্যটি খুঁজে পেয়েছেন। আমি এইরকম প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে নিয়মিত আর্টিকেল লিখে থাকি। তাই দ্যা বর্ষা ওয়েবসাইট এর সাথে থাকুন এবং নিয়মিত আমার লেখা আর্টিকেল গুলো পড়ুন।
إرسال تعليق